সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের 'শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক' উত্তরণের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, 'আইনের শাসন সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আপনারা কী ভালো করছেন এবং যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তা জানানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মিলার দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়ানোর জোরালো সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। ‘এটি আমাদের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে এবং একটি নতুন বিস্তৃত অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ তাদের চলমান সংলাপ ও সহযোগিতাকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করে।
তিনি বলেন, উত্তাল গ্রীষ্মকালে সরকার পরিবর্তনের পর সুদূরপ্রসারী সংস্কারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের পথে যাত্রা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় 'কক্সবাজার' নীতির পরামর্শ ইইউ দূতের
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘পেছনের দিকে তাকালে, আমরা হস্তান্তরের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানাই। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইইউ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ইইউ'র সমর্থন ও অঙ্গীকারের নিদর্শন হিসেবে তারা এসব ইস্যুতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা জোর দিয়ে বলছি যে, ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়ে সকল পর্যায়ে এবং সব ফোরামে সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়।’
সংস্কারের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং এটাও পরিষ্কার করতে চাই যে, তারা তহবিল, সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ সংগ্রহসহ প্রাসঙ্গিক সুপারিশগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর বা তারও আগে বাস্তবায়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
মিলার বলেন, ‘আমরা এটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হিসাবে দেখছি।’
তিনি বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট, অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারের উত্থানের দিকেও নজর দিচ্ছেন, যার চারপাশে বিস্তৃত রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ইইউ খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘এটি একটি 'টিম ইউরোপ' পদ্ধতি গ্রহণ, হস্তক্ষেপের সমন্বয় এবং তারা সময়োপযোগী এবং প্রভাবশালী তা নিশ্চিত করা হিসাবে পরিচিত। আমাদের অনেক আহ্বান আছে, কিন্তু কেবল একটি বার্তা আছে।’
এ সময় পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রদূতরা হলেন-
বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই, বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ ডেলিগেশনের প্রধান ও রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিডিএ এআই আন্দ্রে কার্সটেন্স।
নয়াদিল্লিতে ইইউ মিশনের প্রধান/প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে নিযুক্ত বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যান্ডারহাসেল্ট, বাংলাদেশে নিযুক্ত বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই ইয়ানকভ, বাংলাদেশে নিযুক্ত এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত মারজে লুপ, বাংলাদেশে নিযুক্ত লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত পেগি ফ্রান্টজেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত রোবার্ট ম্যাক্সিয়ান, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাইপ্রাসের মনোনীত হাইকমিশনার এভাগোরাস ভ্রিওনাইডস, নয়া দিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসের ঢাকা অফিসের প্রথম সচিব গ্যাবর জুকস, নয়া দিল্লিতে পোল্যান্ড দূতাবাসের কাউন্সেলর জারোস্লাভ জেরজি গ্রোবেরেক, নয়া দিল্লিতে পর্তুগাল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন সোফিয়া বাতালহা, নয়া দিল্লিতে স্লোভেনিয়া দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ইরমা সিনকোভেক, নয়া দিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব রুক্সান্দ্রা সিওকানেলিয়া।
আরও পড়ুন: জর্জিয়ায় ইইউ আলোচনা স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আহত ৪৪