জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিতের ঘোষণার পর শনিবার তিবলিসিতে টানা তৃতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে করেন বাসিন্দারা। এ সময় ৪৪ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ২৭ জন বিক্ষোভকারী, ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন।
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জর্জিয়ার পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করেন এবং আতশবাজি ফোটান। ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিদজিনা ইভানিসভিলির কুশপুত্তলিকাও পোড়ান। এধিকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে সরকারের প্রতিরক্ষা
প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে জর্জিয়ার ইউরোপীয় সংহতি প্রচেষ্টা পরিত্যাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রবিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যা প্রত্যাখ্যান করেছি, তা কেবল লজ্জাজনক ও অপমানজনক ছিল।’
এই বিক্ষোভের জন্য বিরোধী রাজনীতিবিদদের দায়ী করেন কোবাখিদজে এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
আরও পড়ুন: কপ২৯: স্বল্পোন্নত-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ২০০ মিলিয়ন বরাদ্দ দিতে ইইউ’র সমর্থন চাইল বাংলাদেশ
কোবাখিদজে জর্জিয়ার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থগিত করার ঘোষণাকেও খাটো করে দেখেছেন। এটিকে বিদায়ী প্রশাসনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন ইউএস নেতৃত্বের জন্য ট্রানজিশনকে জটিল করে তোলা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সমালোচনা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রবিবার একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস এবং সম্প্রসারণ কমিশনার মার্তা কোস জর্জিয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। তারা এই পদক্ষেপকে বেশিরভাগ জর্জিয়ানের ইউরোপীয় সমর্থনের আকাঙ্ক্ষা থেকে একটি বিচ্যুতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের করার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের পর এসব বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে বিতর্কিত "ফরেন ইনফ্লুয়েন্স" আইন পাসের পর জর্জিয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছিল এটি। সমালোচকরা দাবি করেন এটি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা স্থগিতের জন্যও সমালোচনা করেছে। তারা জর্জিয়ায় গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে।
বিরোধীদের নির্বাচনের আহ্বান
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির বিরুদ্ধে ২৬ অক্টোবরের সংসদীয় নির্বাচনে রাশিয়ার সমর্থন এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতারা। তাদের দাবি, এই নির্বাচন জর্জিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।এর ফলস্বরূপ ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংসদ বর্জন করেন বিরোধীরা।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জর্জিয়ার পশ্চিমা সমর্থক প্রেসিডেন্ট স্যালোমে জৌরাবিখভিলি সরকারের বিরুদ্ধে দেশের গতিপথ ‘আধা রুশ’ রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন নির্বাচন চাই, তবে সেখানে যেন মানুষের ইচ্ছাকে পুনরায় বিকৃত বা চুরি না করা হয়।’
ইউরোপীয় আকাঙ্ক্ষা ঝুঁকিতে
ব্লকের সুপারিশ মেনে চলার শর্তে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জর্জিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থী দেশ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তবে, এই বছর শুরুর দিকে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের উদ্বেগের মধ্যে দেশটির সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিত করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদ এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতি নতুন প্রতিশ্রুতির দাবি জানিয়েছেন।
উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় সংকট মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় চাপের মুখোমুখি হচ্ছে জর্জিয়ার সরকার।
সূত্র: এজেন্সি