প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলগুলো দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
বুধবার একাদশ সংসদের ২০তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে যখন ক্রান্তিকালে (সঙ্কট), আমাদের বিরোধী দলে যারা আছেন তাদের মধ্যে আমি এ নিয়ে উদ্বেগ দেখিনি। বরং আমি দেখছি যে কীভাবে তারা এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটা করা কি ন্যায়সঙ্গত?’
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যের কোন উদ্যোগ নেবে কি না জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক (কিশোরগঞ্জ-৩)-এর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশ কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়, বিরোধী দলগুলোর তখন দেশপ্রেম দেখানো উচিত। কেন তারা এটা করছেন না?
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বে যখন সংকট দেখা দেয়, তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রবণতা পরিহার করতে হবে।’
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি বসছে বুধবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, কোন এলাকায় আ.লীগকে ভোট দিল বা দিল না, তা বিবেচনা না করেই তার সরকার সমগ্র বাংলাদেশ ও জনগণের উন্নয়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,তার সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকেনি। অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছেন, কিন্তু এক মুঠো ভাত দিয়েও জনগণের পাশে দাঁড়াননি।
তিনি বলেন, ঐক্য শুধু কথার বিষয় নয়। সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ‘আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা এগিয়ে আসবে আমরা তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব।’
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার অপর একটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে দোষ-ত্রুটি খোঁজার পরিবর্তে, জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন।
হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার পর প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে এবং সারা বিশ্বের মানুষ এখন এর শিকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দোষ-ত্রুটি খুঁজে না দেখে সংসদ সদস্যদের ভাবা উচিত তারা আইন প্রণেতা হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী করতে পারেন।
এর আগে, রুমিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিপিডি এবং একটি সংবাদপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে সেই প্রশ্ন করেন। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্যের দাম সবচেয়ে বেশি।
দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে এমন ৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে বলেও তিনি তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সবার বিবেচনা করা উচিত।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
তিনি বলেন,‘আমি অস্বীকার করছি না যে বাংলাদেশে দাম বাড়েনি। যেহেতু দাম বেড়েছে, আমাদের মধ্যে যারা বেশি দামে কেনার সামর্থ্য রাখে না, তারা যাতে কম দামে কিনতে পারে সেজন্য ভর্তুকি দিয়ে পণ্য সরবরাহ করছি।’
গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদের (মৌলভীবাজার-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ এখনও অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও আছে যারা জনগণের ভোগান্তি চিন্তা করে না, তারা শুধু নিজেদের মুনাফার চিন্তা করে। তারা কখনও কখনও পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে, তিনি ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং তা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কোনো স্থান নেই: প্রধানমন্ত্রী