বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, 'ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বাসায় আনা হবে। মেডিকেল বোর্ড তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে দেখেছেন মার্কিন চিকিৎসকরা, প্রতিবেদন পর্যালোচনা চলছে
জাহিদ বলেন, মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার থেকে খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
গত বছরের ৯ আগস্ট হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে নানা শারীরিক জটিলতায় সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এভারকেয়ারের সিসিইউতে স্থানান্তর
গত ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শন্ট (টিআইপিএস পদ্ধতি) নামে পরিচিত হেপাটিক পদ্ধতি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসক হামিদ রব, ক্রিস্টোস জর্জিয়াডেস ও জেমস পি এ হ্যামিল্টন গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টিআইপিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন।
টিআইপিএস এমন একটি পদ্ধতি যা পোর্টাল শিরাগুলোকে নিম্ন চাপযুক্ত সংলগ্ন রক্তনালীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে একটি স্টেন্ট (টিউব) সন্নিবেশ করে। এটি রোগাক্রান্ত লিভারের মাধ্যমে প্রবাহিত রক্তের চাপ উপশম করে এবং রক্তপাত এবং তরল ব্যাকআপ বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে। একটি টিআইপএস পোর্টাল শিরা (পোর্টাল হাইপারটেনশন নামে পরিচিত) এর উচ্চ রক্তচাপকে উপশম করে যা প্রায়শই লিভার সিরোসিসের বিন্যাসে ঘটে।
২০২১ সালের নভেম্বরে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার পানি বৃদ্ধি-রক্তক্ষরণ রোধে টিআইপিএস দিয়েছেন মার্কিন চিকিৎসকরা
বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারও বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু আইনমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে পুরান ঢাকার কারাগারে পাঠানো হয়। পরে একই বছর দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে একাধিকবার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন ৩ চিকিৎসক