সেই সাথে সৌদিতে চলমান ধরপাকড়ের শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে এসেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি।
এদিকে, বিমানবন্দরে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা সকালে সুমির সাথে কথা বলতে পারেননি। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে গ্রহণ করেন। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে সহযোগিতা করেন।
পরে সুমিকে বিমানবন্দর থেকে বের করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি দল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। এ সময় এমনকি সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে এলেও তার সাথেও দেখা করতে দেয়া হয়নি।
সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম ও মা মল্লিক বেগম।
গত ৩০ মে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রূপসী বাংলা ওভারসিজের মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান সুমি। সেখানে নির্যাতনের শিকার সুমির আকুতির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় তার স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’
থানায় জিডি করার পর ২২ অক্টোবর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ করেন নুরুল। সেই সাথে তিনি স্ত্রীকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনতে ২৭ অক্টোবর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাকের সহায়তায় ২৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
শুরুতে সুমির নিয়োগকর্তার দাবিকৃত ২২ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে ‘ফাইনাল এক্সিট’ অর্থাৎ দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জানানো হলেও পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি আরবে সুমির মতো কতজনের দুরবস্থা চলছে সে তথ্য কারও কাছে নেই। আমাদের দূতাবাসের বা সরকারেরও নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের রাষ্ট্রদূত বললেন যে ১৩ হাজার মেয়ে চার বছরে ফিরে এসেছে। কতজন আরও বিপদে আছে আমরা জানি না। তবে সুমিকে উদ্ধারের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো কোনোভাবে যদি তারা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তাহলে তাদের সত্যিকারের অবস্থাটা জানাতে পারেন।’
নারী কর্মীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আট বছর আগে যখন সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর কথা উঠে তখন থেকে একটা দাবি ছিল যে নারী কর্মীরা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন। সরকার সেই প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে নারীদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। ফলে বিপদে পড়লেও কাউকে জানাতে পারেন না। অথচ শুধু যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হতো তাহলে পরিস্থিতি বদলে যেত। এই যে গত চার বছরে ১৫২ জন মেয়ে মারা গেলেন, তাদের ৬৬ জন আত্মহত্যা করলেন, শুধু এ বছরেই ৫৩ জন নারীর লাশ আসল, তাদের কেউ কেউ হয়তো বেঁচে যেতেন।’
ফিরেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে করে দেশে এসেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে এক হাজার ৬৪৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
নতুন ফেরাদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিটন। সৌদিতে থাকার আরও প্রথম তিন মাসের মেয়াদ থাকলেও তাকে ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। লিটন মাত্র দেড় মাস আগে রিক্রুটিং এজেন্সি এরোমা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি গিয়েছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক ছেলে দুলাল হোসেন জানান, সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে ছয় মাস আগে সৌদি যান। কিন্তু তারও একই পরিণতি। বাজার করতে যাওয়ার পথে পুলিশ ধরে এক কাপড়েই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সাত মাস আগে সৌদি যাওয়া নওগাঁর জুয়েলের গল্পটাও একই রকম। তার অভিযোগ আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) থাকা সত্ত্বেও দেশে ফেরত পাঠানো হলো তাকে।
ফেরত আসা কর্মীদের অভিযোগ, কফিলকে (নিয়োগকর্তা) আকামার টাকা দেয়া হলেও তাদের আকামা তৈরি করে দেয়া হয়নি। আর পুলিশ ধরলে দায়িত্ব না নিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন কফিল।