মডেল মুশফিকা তিনার বাবা ও চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খানের ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণ অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে ভিডিওর লিংক কোথাও পেলে তা অপসারণের জন্য আবেদনকারী (আদালতের নজরে আনা) আইনজীবীকে আদালত বা বিটিআরসির আইনজীবীকে সরবরাহ বলা হয়েছে। আবেদনকারী আইনজীবী কোন লিংক দিলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা ই রাকিব। আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম ফয়েজ।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় বসে ফেসবুক লাইভে এসে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান (৫৮)। রাজধানীর ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির এক ফ্ল্যাটে ওই ঘটনা ঘটে। পরে ‘ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা’ শিরোনামে ৩ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেদিন ওই প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ। ভিডিওগুলো অবিলম্বে অপসারণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান তিনি। শুনানি নিয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা আবু মহসিন খানের ফেসবুক ভিডিও এবং ওই ঘটনার স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন: রিয়াজের শ্বশুরের আত্মহত্যার ভিডিও সরানোর নির্দেশ
আদেশ পাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে ওই ভিডিও ও স্থিরচিত্র সরাতে বিটিআরসিসহ তিন বিবাদীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মহসিন খানের লাইভ ভিডিও ও স্থিরচিত্র সব ধরনের ছাপা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্য সব মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপ জানিয়ে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে। শুনানিতে অংশ নিয়ে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, ২২৭টি লিংক চিহ্নিত করে বিটিআরসি। এর মধ্যে চিহ্নিত ২১১টির মধ্যে ১৯০টি লিংক ফেসবুক থেকে সরানো হয়েছে। ইউটিউবে ১০টি লিংক চিহ্নিত করে তার মধ্যে ৬টি ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। আর লাইকি ও টিকটক থেকে তিনটি করে ছয়টি লিংক সরানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ বলেন, কিছু কিছু লিংক সরানো হলেও এখনো সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিও অহরহ দেখা যাচ্ছে। আদালতের আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ওই ঘটনার সূত্রে একজন কলেজছাত্র আত্মহত্যাও করেছে। চাইলে বিটিআরসি কেন সব সরাতে পারবে না? বিটিআরসির কাজ কি এগুলো বন্ধ করা। এ বিষয়ে খন্দকার রেজা-ই-রাকিব আদালতকে বলেন, ফেসবুক একটি বিদেশী কোম্পানি। এরা সবকথা শোনে না। আদালত এসময় বলেন, বাধ্য করতে হলে আইনের মধ্যে আনতে হবে। অনেক লিংক অপসারণ হয়েছে উল্লেখ করে আদালত বলেন, লিংক দিলে বিটিআরসি তা অপসারণে ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করলেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর