সরকারি চাকরিজীবীদের জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়ে মানুষের সেবা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আপনাকে জনগণের দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে, জনগণের জন্য জনগণকে (এই প্রক্রিয়ায়) জড়িত করতে হবে।’
রবিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সে ৬০২ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৩০ জন সেরা পারফরমারের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি নতুন বাস্তবায়িত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (জিইএমএস) সফটওয়্যার উন্মুক্ত করেন।
শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারীদের সর্বদা জনগণের সেবক মনে করে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সেবাকে নিছক চাকরি মনে করবেন না, বরং দেশ সেবা করার সুযোগ। আপনাকে এই জিনিসটি সর্বদা মনে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৮ সময়কে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি কালো অধ্যায় বলে অভিহিত করেন কারণ ২৯ বছরেও দেশ এগিয়ে যেতে পারেনি।
আরও পড়ুন: কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয় সে বিষয়ে জ্ঞান দেওয়ার প্রয়োজন নেই: প্রধানমন্ত্রী
অর্থনৈতিক চাপ কমাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ এবং বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রশমিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কাজ করতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির কারণে আজ আমাদের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে সবাই উৎপাদন বাড়ায় এবং কোনো জমি অনাবাদি না থাকে।’
তিনি বলেন, সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
দেশে এখনও বিপুল সংখ্যক অনাবাদি জমি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি কর্মকর্তাদের তাদের সমস্ত অনাবাদি জমি উৎপাদনে আনতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বলেন।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশ কিছু সমস্যায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আজকে অনেকে রিজার্ভ সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। আমি বলেছি রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দেশে যতক্ষণ খাদ্য থাকবে ততক্ষণ আমরা ভাবি না। আমরা ফসল চাষ করব এবং আমাদের খাদ্য তৈরি করব। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা ব্যয় করব এবং কিছু পরিমাণে কম (আমদানি হ্রাস) ক্রয় করব।’
প্রধানমন্ত্রী খাল, বিল এবং অন্যান্য জলাশয় রক্ষা করে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুন: লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী
তিনি তাদের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ফল সঠিকভাবে সঠিক সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাতে, শুধুমাত্র একক পণ্য- তৈরি পোশাকের উপর নির্ভরতা কমাতে রপ্তানি ঝুড়ির বৈচিত্র্যকরণ, নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধান এবং টেকসই উন্নয়ন কাজগুলি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে বলেন।
বিপুল জনসংখ্যার দেশে জমির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের মধ্যে এই মনোভাব তৈরি করতে হবে যে জনসংখ্যা একটি মূল্যবান সম্পদ।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ‘আমরা অন্তত দাবি করতে পারি যে আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ... বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।’
তিনি বলেন, তার সরকার রূপকল্প ২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে এবং এখন দেশের অর্থনীতি, সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান কারিগর ও সৈনিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বলেন।
‘মাই ভিলেজ মাই টাউন প্রোগ্রাম’ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যাতে গ্রামবাসীদের নাগরিক সুবিধা পেতে শহরে যেতে না হয়।
চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং বর্তমান অবস্থান থেকে বাংলাদেশ যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সবাইকে কাজ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ইভেন্টে তাহসিন বিনতে অনীশ সেরা পারফরমার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে রেক্টর পদক এবং সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন এবং সুমায়া জাহান ঝুলকা ও অঙ্কন পাল যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা অভিনয়শিল্পী হিসেবে সম্মাননা ও ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
ছয় মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সটি সর্বকালের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতে ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়।
পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা (৪২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে), সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (জিইএমএস) প্রোগ্রাম, নবনির্মিত ১৫ তলা বিপিএটিসি ডরমেটরি (২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে) এবং কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলে দুটি নবনির্মিত সার্কিট হাউস।
বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) গত ছয় মাসের কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন এবং প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী চারজন তাদের অনুভূতির কথা জানান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এবং ৭৫তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন।
পরে ৭৫তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের অংশগ্রহণকারীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন: দেশের ভাবমূর্তি আরও উন্নত করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী