রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং সারা দেশে অব্যাহত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রায় একই সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিলটি শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে রায় সাহেব বাজার, তাঁতিবাজার, নয়াবাজার ও মিডফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে ক্যাম্পাসের ভাষা শহিদ রফিক ভবনের নিচে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন’, ‘বিএনপির অনেক গুণ, দশ মাসে দেড়শ’ খুন’, ‘যুবদলের চাঁদাবাজরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘বিএনপি, ভুয়া ভুয়া’, ‘আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে’, ‘জিয়ার সৈনিক, চাঁদা তোলে দৈনিক’, ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ ইত্যাদি এসব স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সমাবেশে চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে নৃসংসভাবে হত্যাসহ সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম সাম্যের ও শান্তিপূর্ণ একটি বাংলাদেশ, চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু হাসিনা যাওয়ার দিন বিকাল থেকেই একটা দল চাঁদাবাজি শুরু করেছে। শহিদ আবু সাঈদ, শহিদ ওয়াসিম, শহিদ সাজিদের ভাইয়েরা মারা যায়নি। প্রয়োজনে আবার জুলাই হবে।’
আরও পড়ুন: ঢাকায় ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় যুবদলের ২ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শশিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী বলেন, ‘এই পাথরটা আমার ভাইয়ের ওপরে নয়, মনে হয় আমার বুকের ওপর পড়ে। এই ক্যাম্পাসে যেমন ছাত্রলীগ বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে, ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মিলফোর্ডে ঘটেছে। ১০ মাস না যেতেই আপনারা আপনাদের দলের লোকদেরই হত্যা করছেন। হাসিনার দায়িত্ব আপনাদের ওপর দিয়ে যায়নি। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টকে যেভাবে প্রতিহত করেছি, তাদেরও প্রতিহত করতে বাধ্য হব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরও পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে চাঁদা না দেওয়ায় জনসম্মুখে পাথর দিয়ে মানুষ খুন করার মতো ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তারা জুলাইকে ধারণ করতে পারে না। যদি বিএনপি এই ঘটনার বিচার না করে, তবে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলব। আর ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার জনগণের ম্যানডেট নিয়ে বসেছে, কোনো দলের ম্যানডেট নয়। আমরা এর বিচার চাই।’