সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রুমমেটের দেয়া পোস্টের জেরে মানসিক চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থী। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ মোড় এলাকায় ‘বাচ্চু মিয়ার মেস’ নামে একটি ছাত্রী নিবাসে ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আত্মহত্যার চেষ্টাকারী শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রাবিনা ঐশী৷
বাড়িওয়ালা ও মেসে অবস্থান করা অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাবিনা ঐশী ও একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়দা ফৌজিয়া নদী ওই মেসে একই কক্ষে থাকেন। কিন্তু ১৩তম ব্যাচের ঐশীর বান্ধবী লাবিবা ইসলাম নিয়মিত গ্রুপ স্টাডির নামে রাবিনা ঐশীর কাছে এসে থাকে এবং নিয়মিত আড্ডা দেন। এতে প্রায় দুই মাস ধরে সমস্যায় ভুগছিলেন নদী।
আরও পড়ুন: কুবির ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
শনিবার নদী মেস মালিক সোহাগ আলীকে এই সমস্যার কথা জানালে তিনি ঐশীকে গেস্ট সংখ্যা ‘লিমিটে’ আনতে বলেন। এটিকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয় এবং ঐশী এই ঘটনা তার বিভাগের মো. এরশাদ হোসাইনকে জানালে তিনি একই ব্যাচের প্রণব চক্রবর্তীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের আরও কিছু আবাসিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে বাড়িওয়ালাকে খুঁজতে খুঁজতে মেয়েদের মেসের ভেতরে প্রবেশ করেন।
জুবায়দা ফৌজিয়া নদী অভিযোগ করে বলেন, মেসে ঢুকে এরশাদ, প্রণবসহ আরও কয়েকজন তাকে শাসান। তিনি বলেন, ‘উনারা মেসে ঢুকে আমাকে বলে তোরে মাইরা ফালাইয়া রাইখা যামু; কেউ টেরও পাইব না, তোর বাপ-মা শিক্ষা দেয় নাই? ক্যাম্পাসে কেমনে ফ্রিলি চলিস দেইখা নিমু নে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় নদী সাহায্যের জন্য তার বন্ধু রিয়াজসহ অন্যান্যদের ডেকে আনেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাড়িওয়ালা দুই গ্রুপকে নিয়ে নিচে নেমে যান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সে সময় উপস্থিত থাকায় বাড়িওয়ালা ও শিক্ষার্থীদের সাথে বসে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে রুম পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে রুমে ফিরে জুবায়দা ফৌজিয়া নদী ‘জীবন ও সম্ভ্রম নিয়ে শঙ্কায়’ আছেন উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার ওই স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়লে মানসিক চাপে পড়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ঐশী।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহজালাল বলেন, আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এখন তাকে আইসিইউতে রাখা দরকার। তাই আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল বলেন, আমার কাছে একজন লিখিত অভিযোগ দিয়ে গিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আরেকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি। তাই তাড়াহুড়ো করছি না। দু’পক্ষের কথা শুনেই সমাধান দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: কুবির প্রথম প্রো-ভিসি ড. হুমায়ুন