প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) জ্বালানি বর্জ্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া।
তিনি বলেন, 'আমরা জ্বালানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছি। রুশ ফেডারেশন এই জ্বালানি বর্জ্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ইউরেনিয়াম জ্বালানি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পাবনার ঈশ্বরদীতে কারখানার সাইটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন মস্কোর ক্রেমলিন থেকে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা ও নির্মাণকাজ কোনো ধরনের দুর্যোগের সময় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ক্লাবে বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী এ দিনটিকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের দিন হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে সফল হচ্ছে।’
তিনি বলেন, তার সরকার ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছে এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইএইএ) প্রতিষ্ঠা করেছে।
“আইএইএ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এই প্রতিষ্ঠান"- তিনি যোগ করেন।
আরএনপিপির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হবে।’
তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য সরকার পৃথক আইনের মাধ্যমে “নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড” নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’প্রদানের লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারের বিষয়ে ভিশন স্টেটমেন্ট অ্যান্ড পলিসি স্টেটমেন্ট’ প্রণয়নের অনুমোদন দিয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে, আমরা শক্তি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তৎকালীন সরকার ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০’ প্রণয়ন করেছিল এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আইএইএ’র আন্তরিক সমর্থনে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি কারণ বিষয়টি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। আমাদের সরকারের ৯৬-০১ সালের মেয়াদ জটিল আইন প্রণয়নের আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে তার সরকার "ভিশন-২০২১" এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে "পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১০" প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আবার রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।’ বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। ‘তাছাড়া, আইএইএ শুরু থেকেই বাংলাদেশকে নানাভাবে সাহায্য করে আসছে।’
এর জন্য, তিনি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, আইএইএ ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এটি সম্ভব করার জন্য রাষ্ট্রপতি পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি মস্কোতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির বিশেষ আতিথেয়তার কথাও স্মরণ করেন।
২ অক্টোবর প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার (ভ্লাদিমির পুতিনের) সার্বিক সহযোগিতায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কারণ প্রতিবেশী দেশটি প্রকল্পের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে।
বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার করেন তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে জ্বালানি সরবরাহের সার্টিফিকেট এবং জ্বালানি অ্যাসেম্বলির মডেল হস্তান্তর করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিয়েনা থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আরএনপিপির জন্য পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচের উৎপাদন ও বিতরণের উপর একটি অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালক ও এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর আরএনপিপি সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন।ৎ
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়: মোমেন
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের বিদায়ী সাক্ষাৎ