রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) হবে বুধবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করবেন।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কর্মসূচির কথা জানান।
তারা বলছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ভৌত কাজের ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন করার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মোট ভৌত কাজের ৫৩ শতাংশ সম্পন্ন হবে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দু’টি ইউনিট থাকবে। যার প্রতিটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে।
রাশিয়ার রোসাটম স্টেট করপোরেশনের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এই অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে ঢাকা আসছেন এবং প্রধানমন্ত্রী ঢাকার তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
গত বছরের অক্টোবরে প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. শওকত আকবর ইউএনবিকে বলেছেন, ‘চুল্লি স্থাপনের সঙ্গে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাজের লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হবে।’
সরকার ২০০৯ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় এবং দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্রেডিট চুক্তি সই করে যাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা- রোসাটমকে এর ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি সই করে।
চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা টিভেল জয়েন্ট স্টক কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো জীবনকালের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করবে।
বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটকে প্রতি ১৮ মাস পর পর মোট প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানির এক তৃতীয়াংশ পুনরায় লোড করতে হবে এবং প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুনরায় লোড বিনামূল্যে রাশিয়ান ফার্ম প্রদান করবে।
প্রতিটি পারমাণবিক জ্বালানি পুনরায় লোড করতে খরচ হবে ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ৫৫০ কোটি টাকার সমান।
ড. শওকত আকবর বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের পর যে বড় কাজগুলো অসমাপ্ত থাকবে তার মধ্যে রয়েছে প্রি-অপারেশনাল টেস্টিং এবং ফুয়েল লোডিং।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু করার আগে আরও কিছু কাজ শেষ করতে হবে। ‘আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করব।’
তিনি বলেন, ‘পাওয়ার গ্রিড লাইন নির্মাণ এবং যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে যা রয়েছে তা আগামী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আগে সম্পন্ন করতে হবে।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির জন্য একটি নিবেদিত কোম্পানি নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এর (এনপিসিবিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেছেন, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট।
প্রাথমিকভাবে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ২০২২ এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ থেকে শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তারপর লক্ষ্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এনবিসিবিএল-এর কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া এবং বেলারুশসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ থেকে প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি কর্মী এখন বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদার এবং এর সাব-কন্ট্রাক্টরদের অধীনে এই প্রকল্পে নিযুক্ত রয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সময়মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এই প্রকল্পের রাশিয়ান ঠিকাদার রোসাটম এ বছরের ১ মার্চ একটি বিবৃতিতে এই ধরনের অনিশ্চয়তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছে যে সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কোন ব্যাঘাত হবে না।
রোসাটম বলেছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি এবং কাজের সময়সূচিগুলোর মধ্যে কোন বাধার পূর্বাভাস দেয়া হয়নি।’
যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বর্তমান যুদ্ধ সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশ কর্তৃক রাশিয়ার ওপর আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে রোসাটম এটি স্পষ্ট করেছে।
রোসাটমের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনকে একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তারা বলেন, নকশা অবস্থানে দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করার কার্যক্রমটি বেশ কয়েকটি ধাপে পরিচালিত হয়েছিল।
একটি লিয়েবয়ার-১১৩৫০ ভারী ক্রলার ক্রেন চুল্লি সিলিন্ডারটিকে পাওয়ার ইউনিটের পরিবহন পোর্টালে তুলেছে।
এরপর একটি বিশেষ পরিবহন ট্রলিতে এটিকে চুল্লির বগির কেন্দ্রীয় হলে সরানো হয়েছিল। আরও একটি পোলার ক্রেনের সাহায্যে চুল্লি সিলিন্ডারটিকে একটি খাড়াভাবে তোলা হয়েছিল এবং চুল্লির যন্ত্রে একটি সাহায্যকারী ফ্রেমে স্থাপন করা হয়েছিল।
রোসাটম জানিয়েছে, এইএম প্রযুক্তিতে নির্মিত ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি সিলিন্ডারটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন।