ত্রিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বুধবার বলেন, ‘এ আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশা করছি।’
তিনি বলেন, সচিব পর্যায়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ গত বছরের ২০ জানুয়ারি এই জাতীয় ত্রিপক্ষীয় হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২০: রোহিঙ্গাদের জন্য যন্ত্রণার আরও এক বছর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, মিয়ানমার খুব কম লোককে যাচাই করেছে। তারা ধীর গতিতে এগোচ্ছে। তারা মাত্র ৪২ হাজার জনের যাচাই করেছে। এ বিষয়ে ‘সিরিয়াস লেক অব সিরিয়াসনেস’ রয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ তার কাজ করে যাচ্ছে তবে মিয়ানমার সেরকমভাবে সাড়া দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় দেশগুলোর সিদ্ধান্ত কৌশলগত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এক প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে সবসময়ই আশাবাদী জানিয়ে বলে, ইতিহাস বলে যে তারা ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে তাদের নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়েছিল।
আশায় মানুষ বাঁচে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও সে আশায় বেঁচে আছে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন হবে এ আশায় তারা আরও একটি বছর ২০২০ সালে পার করেছে। যদিও তাদের ভালো দিনের আশা এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর জোরপূর্বক নয়: ঢাকা
চলতি মাসে এই প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরু হবে বলে সরকার এর আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারি ও মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের কারণে ২০২০ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
মাতবর দেশগুলো রোহিঙ্গাদের তাদের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান বলে মনে করে।
প্রায় তিন বছর আগে মিয়ামারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ চালিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আরও অনেককেই এ বিষয়েটি দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা স্থানান্তরকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে ঢাকার আহ্বান
সেসময় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ‘সহিংস গণহত্যা’ থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সম্প্রতি ইউএনবিকে বলেন, মিয়ানমার যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা দেশটিতে ফিরে যায়নি। এ বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ্যে আন্তরিকতার অভাব আছে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সেদেশের সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছে না এবং তাদের আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। মিয়ানমার এই প্রস্তাবে দ্বিমত না করলেও কোনও প্রস্তাব এখনো বাস্তবায়ন করেনি।’
আরও পড়ুন: 'আলহামদুলিল্লাহ, ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধায় সন্তুষ্ট’: এক রোহিঙ্গার অনুভূতি
রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার একটি বন্ধুপ্রতীম দেশ। তারা আমাদের শত্রু নয়। আমরা মিয়ানমারের বিপক্ষে কিছুই করি নি। মিয়ানমারকে অবশ্যই একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে কেননা রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও সুরক্ষার মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যাবে এটা চায় বাংরাদেশ।
মিয়ানমারের বন্ধু দেশ জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারত এবং আসিয়ান দেশগুলো থেকে দেশটিতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে উদ্বেগের কিছু নেই, জাতিসংঘকে জানাল বাংলাদেশ
ওই প্রস্তাবে মিয়ানমার হ্যাঁ বা না কিছু বলেনি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সাথে যোগাযোগের জন্য রোহিঙ্গা নেতাদের রাখাইনে এবং মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তাদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সফরের প্রস্তাব দিয়েছিল।
ড. মোমেন বলেন, এ প্রক্রিয়ায় আত্মবিশ্বাস বাড়ানো দরকার এবং বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা। তাদেরকে অবশ্যই দেশে (মিয়ানমার) ফিরে যেতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, একটা বিষয়ে সব দেশই একমত তা হলো প্রত্যাবাসন একমাত্র সমাধান এবং প্রত্যাবাসনে যত দেরি হবে এ অঞ্চল এবং এর বাইরেও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও মায়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার ‘প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা’ সম্পর্কিত একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছে যেটিকে রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া সহজ হবে বলে বলে মনে করা হয়েছিল।