সেই সাথে সিসিএনএফ নেতারা দাতা ও উন্নত দেশগুলোর বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ধনী দেশ ও জাতিসংঘের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আগামী ২২ অক্টোবর যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও জাপানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য দাতা সম্মেলনের প্রাক্কালে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সিসিএনএফ’র কো চেয়ার এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী, সিসিএনএফ’র কো চেয়ার ও পালস’র নির্বাহী পরিচালক এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার, আইডিএফ নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম (চট্টগ্রাম), হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম (উখিয়া), অগ্রযাত্রা’র সভাপতি নীলিমা আক্তার চৌধুরী (কক্সবাজার) এবং সিসিএনএফ সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
রাশেদ মোহম্মদ আলী বলেন, ‘স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ রয়েছে, কিন্তু নাফ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে সম্প্রদায় এখনও সেখানে মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।’
তিনি স্থানীয়দের জন্য আসা সহায়তার পূর্ণ স্বচ্ছতার আহ্বান জানান।
আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সিসিএনএফ স্থানীয় সিএসও/এনজিওগুলোর বিকাশের জন্য পুল ফান্ড এবং গ্র্যান্ড বার্গেইনের আলোকে প্রত্যক্ষ অর্থায়নের অনুরোধ করে আসছে। জাতিসংঘ এজেন্সিগুলোর নেতৃত্বে প্রণীত স্থানীয়করণ টাস্ক রিপোর্টেও এটি উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু এর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি জানান, ২০১৮ থেকে সিসিএনএফ যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনাকে (জেআরপি) নিরাপত্তা ও সংঘাত প্রতিরোধে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় সিএসও’র অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন।
জহিরুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও বাংলাদেশ দায়ী না হয়েও এই সমস্যাগুলোতে দেশটিকে ভুগতে হচ্ছে। তিনি দাতা দেশগুলোকে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
একমাত্র টেকসই সমাধান হিসেবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ধনী ও দাতা দেশগুলোর প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
বিমল দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এখন পর্যন্ত ২.৬৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা এসেছে। এ পরিমাণটিকে হিসাব করলে প্রতি মাসে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৪২৩ ডলার। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মোট সহায়তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ প্রত্যক্ষ সেবা হিসেবে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছেছে।
তিনি জাতিসংঘ এবং আইএনজিও’র ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করেন, কিন্তু অর্থ সহায়তায় স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে বিভ্রান্তি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীর আলম কোভিড ১৯ মোকাবিলায় জাতিসংঘ, বিশেষ করে ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম’র ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাপ্ত অর্থ সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার এবং জাতিসংঘের যৌথ নেতৃত্বাধীন একটি একক কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে।’
নীলিমা আক্তার চৌধুরী আইএসসিজিতে (ইন্টার সেকটোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ) স্থানীয় সরকার এবং সিএসও/এনজিওগুলোর অংশগ্রণের পূর্ণ সুযোগ তৈরির অনুরোধ করেন।
আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয় অংশীজন এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ‘নিচ থেকে উপরে যাওয়ার বা ‘বটম-আপ’ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।