লক্ষ্মীপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী মো. মিলন হোসেনকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্ত্রী জাহানারা বেগমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বুধবার (৩১ মে) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামি জাহানারা আদালতে হাজির ছিলেন। ঘটনার ১৩ মাস পর এ হত্যা মামলার রায় হলো।
মামলার বাদি তাদের ছেলে মো. সাফায়েত হোসেন ওরফে মাহবুব। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খাগুরিয়া গ্রামে।
আরও পড়ুন: ইসলাম বিরোধী মন্তব্য করার দায়ে হিন্দু যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জাহানারা বেগম পারিবারিক কলহের জেরে তার স্বামী মোহনকে হত্যা করে। উক্ত মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে জাহানারা বেগমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে সুপারি গাছের সঙ্গে হাত বাঁধা মিলনের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
পরদিন মিলনের ছেলে সাফায়েত হোসেন বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে নিহত মিলনের স্ত্রী জাহানারা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে তিনি স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, স্বামী মিলনের সঙ্গে তার ৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাদের তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। বিয়ের পর থেকেই মিলন অস্বাভাবিক আচরণ করে আসছিলেন। খিটখিটে স্বভাবের কারণে মিলন বিভিন্ন সময়ে তাকে নির্যাতন করতেন।
রমজানের শেষ ১০ দিন জাহানারা তার স্বামীকে মসজিদে এতেফাকে বসতে বলেন। এতে তিনি গালমন্দ করেন। ঘটনার রাতে জাহানারা তার স্বামীকে ঘরের পেছনের একটি বাগানে নিয়ে গিয়ে সুপারি গাছের সঙ্গে গরুর দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে ফেলেন। পরে একটি নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে।
পরদিন সকালে জাহানারা নিজেই পরিবারের সদস্যদের স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ জানায় এবং দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন।
পরে পুলিশের কাছে তার আচরণ সন্দেহজনক হলে জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিতভাবে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড, বাদীর ৫ বছরের কারাদণ্ড