প্রায় দুই দশক আগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থলের পাশে বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ঘোষিত রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এ মামলার যাবতীয় নথি সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছানোর পর এটি ডেথরেফারেন্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন: কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিরা যদি আপিল করে থাকেন তা একসাথে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
এর আগে ২৩ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৪ জঙ্গিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে রায় ঘোষণা করেন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামি হলেন-মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান ওরফে রাশেদ খাঁ, সরোয়ার হোসেন মিয়া, তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল, শেখ মোহাম্মদ এনামুল হক, মোসাহেব হাসান ওরফে রাশু, আমিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন পলাতক। তারা হলেন আজিজুল, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল ও মোসাহেব।
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজের প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী একটি বোমা দেখতে পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৮০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টে বহাল
হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা-কর্মী। এ হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আপিলের রায়ও হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর দণ্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে। ১৪ বছর দণ্ডিত অপর এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
অপরদিকে, হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০০৪ সালে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে ৫০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পরে ২৩ মার্চ রায় ঘোষণা করা হয়।