শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নীতি, অবকাঠামো, বাণিজ্য, আর্থিক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও চীন আরও শক্তিশালী সহযোগিতা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার(২১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও উইং চিফ মো. আনোয়ার হোসেন, বিডা’র নির্বাহী সদস্য ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম, বিসিসিআই’র মহাসচিব আল মামুন মৃধা, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রেফায়েত উল্লাহ মৃধা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যারা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এ যোগ দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বিগত সাত বছরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার করেছে এবং বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রার উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, আগামীতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ শক্তিশালী জীবনীশক্তি উন্মোচন করতে থাকবে এবং চীন ও বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ ও সমৃদ্ধির রাস্তা হয়ে উঠবে।
নীতি সংযোগের বিষয়ে দুই দেশের নেতারা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
অবকাঠামোগত যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশে ১২টি সড়ক, ২১টি সেতু এবং ২৭টি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প নির্মাণ করেছে এবং চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং পদ্মা সেতু রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের প্রথম অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও।
আরও পড়ুন: ইইউ’র পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ওপর নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে না: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
বাণিজ্য সংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টানা ১২ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগদানের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের প্রচার চালিয়ে যাবে, চীনে আম এবং অন্যান্য উচ্চ মানের কৃষি পণ্য রপ্তানি ত্বরান্বিত করবে।’
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা এগিয়ে নেবে। সিআইআইই-এর মতো প্ল্যাটফর্মের ভালো ব্যবহার করবে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য আনতে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ চীনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাতে মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্প্রদায় গঠন করা যায়।
তিনি বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আধিপত্য খোঁজার কোনো কারণে নেই, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ঐতিহ্য নেই এবং সম্প্রসারণ ও লুণ্ঠনের কোনো উপাদান নেই।’ তিনি বলেন, এটা বলা যায় যে বাংলাদেশের আধুনিকায়নের যাত্রায় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ‘ভিশন-২০৪১’ এবং ‘সোনার বাংলার’স্বপ্নের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশের বাস্তবতার জন্য উপযুক্ত।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের দিকনির্দেশনা নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক অবশ্যই নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করবে।
২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
বাংলাদেশে ৬৭০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ‘এইমাত্র, আমি ১৬টি চীনা কোম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছি যাদের দক্ষিণ এশিয়ার সদর দপ্তর বাংলাদেশে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবেন না: বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী