বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। উত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। হাতছানি দিচ্ছে আগামীর সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধির মিরসরাইয়ের।
মাত্র ৫ বছর আগেও দুচোখ যেদিক যায় শুধু চর আর চর এবং দেখা যেত গরু মহিষ আর ভেড়ার দল বেঁধে ছুটে চলা। কিন্তু মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে এখন বিশাল এলাকাজুড়ে যতদূর চোখ যায় কর্মমুখর চারদিক। জনমানুষের কোলাহল। নির্মাণ সামগ্রী যন্ত্রপাতি বোঝাই ট্রাক-লরি-ভ্যানগাড়ির আসা-যাওয়ার ব্যস্ততা। চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। সেখানেই আজ এক বাংলাদেশের মাঝে অনন্য মিরসরাইয়ের ছবি ফুটে উঠছে দিনে দিনে।
গোটা বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। তবে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সর্ববৃহৎ এবং বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও শিল্পজোন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মিরসরাইয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও অর্থনীতির এক মহাজংশন। করোনার বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে এ মুহূর্তে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা ও উন্নয়নের মোহনায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, করোনার সময়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। অনুমোদনও সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভূ-কৌশলগত সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানের ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে। এখানে জমির দাম, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা ও চাপ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি নামিদামী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনে এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে-বার্জার পেইন্টস, এশিয়ান পেইন্টস, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস সহ আরও বহু কোম্পানি। আশাকরি চলতি বছরে আরও ২০ থেকে ২৫টি নতুন কোম্পানি কাজ শুরু করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রসঙ্গে বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, সড়ক ও সংযোগ সড়কসহ শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা হওয়ায় বাঁধ ও পর্যাপ্ত সুইচ গেট নির্মাণকাজে অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করবে না।
সরাসরি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি উদ্যোগে এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে অব্যাহতভাবে। এখানে ৩১ হাজার একর জমিতে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ধাপে ধাপে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিল্পনগরকে ঘিরে মিরসরাই, সীতাকুন্ড, ফেনীসহ আশপাশের বিশাল এলাকা অর্থনৈতিকভাবে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে। স্থানীয় লোকজন ঠিকাদার, উপ-ঠিকাদারদের মাধ্যমে নানামুখী কাজে ব্যস্ত। তরুণ-যুবকদের বেকারত্ব ঘুচে আয়-রোজগারের দ্বার খুলে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা একক অথবা যৌথভাবে গার্মেন্টস, নীটওয়্যার, ইস্পাত, লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রাসায়নিক দ্রব্য, বৈদ্যুতিক ও ইলেট্রনিক সরঞ্জাম, ঔষধ, টেক্সটাইল, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, পেইন্টস, মোটরযান বা অটোমোবাইল, আইটিসহ বিভিন্ন সেবাখাতে বিনিয়োগ ও শিল্প, কল-কারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসছে।
বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে শিল্প-কারখানা ছাড়াও মিরসরাই-সীতাকুন্ড ঘেঁষে প্রকৃতির অপার দান বঙ্গোপসাগর উপকূলভাগের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করা হবে কন্টেইনারবাহী বন্দর। বন্দর নির্মাণের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের উৎপাদিত পণ্য রফতানি ও কাঁচামাল আমদানি হবে সহজলভ্য। মিরসরাই হবে আগামী দিনের উপশহর, হবে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর থেকে বন্দরনগরীতে কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ডাইক কাম মেরিন ড্রাইভওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাছাড়া শিল্পনগরের কাছেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার লাইফ লাইন হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ। ভবিষ্যতে নির্মিত হবে হাইস্পিড রেললাইন যা সংযুক্ত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে। সব মিলিয়ে এ শিল্পনগর হবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রাণকেন্দ্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে কিছুটা পশ্চিমে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। এই শিল্পনগরী মহাসড়কের পাশে হওয়াই চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা পেতে সহজ হবে। শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো সুবিধা হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাস ও পানির সংযোগ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার, আবাসন, হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নয়ন