প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যমান জ্বালানি, ব্যাংকিং ও বীমা খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে মার্কিন বিনিয়োগ চেয়েছেন। যেহেতু বাংলাদেশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সহজতর করার জন্য তার অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে।
তিনি বলেন, `যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বাংলাদেশে জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং বীমা খাতে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। আমরা আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, এগ্রো-প্রসেসিং, ব্লু ইকোনমি, ট্যুরিজম, জ্ঞানভিত্তিক হাই-টেক শিল্পের মতো অন্যান্য লাভজনক খাতে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার নিউইয়র্কের লটে প্যালেসে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি নিশা বিসওয়ালের সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিশীল খাতে এফডিআই সহজতর করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উপযুক্ত সময়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় জোরালো পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এডিবি আউটলুক ২০১৯ অনুযায়ী শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু অর্থনৈতিক নীতি এবং সঠিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারের কারণে বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ন, বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি, মধ্যবিত্তের দ্রুত উন্নয়ন, একটি বৃহৎ আঞ্চলিক বাজারের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংযোগ বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য করে তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘একচেটিয়াভাবে শুধু আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ তার একশ’ ইকোনমিক জোন থেকে অফার দিতে প্রস্তুত এবং তার ২৮টি হাই-টেক পার্কে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আমরা ক্রমাগত আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামোগত উন্নতি করছি এবং পদ্মা সেতু ও ঢাকা মেট্রো-রেলের মতো যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে বাংলাদেশে এবং বিদেশি বিনিয়োগ সংসদীয় আইন ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং বিনিয়োগকে স্বীকৃতি দেয়, যা আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তুলতে অবদান রেখেছে, যেটা এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মার্কিন বিনিয়োগ চাইছে।’
জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ এবং দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নে সরকারের মনোযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিশ্চিত করে যে এখানে বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানব সম্পদ পাবে।’
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। আমরা এটাও আশা করি যে, বিজনেস কাউন্সিল মার্কিন সরকারকে বাংলাদেশের জন্য অনুকূল অর্থনীতি ও বাণিজ্য নীতি গ্রহণের জন্য রাজি করাবে।’
বোয়িং, কোকাকোলা, এক্সন মোবিল, শেভরন এবং মাস্টারকার্ডসহ মার্কিন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।