প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যু শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, দেশের জন্যও এক বিরাট ক্ষতি কারণ দলের পাশাপাশি জাতির জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, তার (সাজেদা চৌধুরী) মৃত্যু শুধু আওয়ামী লীগের নয়, আমাদের দেশ, জাতি ও আমার জন্যও ক্ষতি।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সংসদ উপনেতা মরহুম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমান, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথসহ সাবেক একাধিক সংসদ সদস্য ও বিশিষ্টজনের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের শুরুতে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে আলোচনা শেষে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৫ সালের পর অত্যন্ত দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘তিনি দলের আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করতেন এবং সেই কঠিন সময়ে দলকে সুসংগঠিত রাখার চেষ্টা করেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাজেদা চৌধুরী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকতেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলে জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়া সবার হাতেই নির্যাতিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজেদা চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সত্যিই একজন নিবেদিতপ্রাণ আত্মাকে হারালাম।
আরও পড়ুন: অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কোনো স্থান নেই: প্রধানমন্ত্রী
সাজেদা চৌধুরীকে খালা বলে ডাকতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জীবন চলার পথে সবসময় তাকে পাশে পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব, বনায়ন ও পরিবেশসহ জাতির প্রতি তার অবদানের কথা স্মরণ করেন।
রানী এলিজাবেথ-দ্বিতীয় সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের জনগণের কাছে মাতৃত্বের প্রতীক।
রানী এলিজাবেথ-২ কমনওয়েলথ দেশগুলোর প্রতিও আন্তরিক ছিলেন। ‘যখনই আমি কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতাম, রানী আমার সঙ্গে কথা বলতেন এবং আমার খোঁজ খবর নিতেন।’
কমনওয়েলথ দেশগুলোতে নারী নেতৃত্বের সংকট, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে তার উদ্বেগের কথা রানী তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
তার স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রানী একবার তাকে বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সমুদ্রে প্লাস্টিকের দূষণ দেখেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
নিয়ম অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের দুই বর্তমান সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হলে সংসদের দিনের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গত ১১ সেপ্টেম্বর মারা যান এবং সংরক্ষিত নারী আসন-১৯ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য শেখ এ্যানি রহমান গত ১১ অক্টোবর মারা যান।
বাকি পাঁচ সাবেক সংসদ সদস্য হলেন সাবেক হুইপ অধ্যাপক খালেদা খানম (সংরক্ষিত নারী আসন-২৩), গিয়াস উদ্দিন আহমেদ (ময়মনসিংহ-১০), সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (ঢাকা-৫ ও রংপুর-৬), সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসনাত (ঢাকা-৯) ও শাহানারা বেগম (সংরক্ষিত নারী আসন-৪৮)।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক রণেশ মৈত্র ও তোয়াব খান, কিংবদন্তি গীতিকার, পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, প্রখ্যাত শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী এবং প্রখ্যাত নাট্যকার মাসুম আজিজসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে হাউস গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবি এবং দেশ-বিদেশে সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায়ও সংসদ শোক প্রকাশ করেছে।
শোক প্রস্তাব পাসের আগে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, মুহাম্মদ ফারুক খান, এসএম রেজাউল করিম, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।
আরও পড়ুন: মানুষের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রধানমন্ত্রী
পায়রা সমুদ্রবন্দরে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রকল্পের মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর