তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র জাতির পিতা হত্যার সাথে নয়, জাতীয় চার নেতা এবং একের পর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনা কর্মীদের হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন। খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় আসার পরে ঠিক একই কাজ করেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও উপদেষ্টা হিসাবে আবদুল আলীম, মাওলানা মান্নান, শাহ আজিজের মতো তার সহযোগীদের নিয়োগ করেছিলেন। খালেদা জিয়াও সেই পদক্ষেপ অনুসরণ করে পরবর্তীতে নিজামী, মুজাহিদের মতো মানবতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন।’
খুনি রশিদ ও হুদাকেও খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য করেছিলেন, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘তাদের সাথে যদি কোনো যোগসূত্র না থাকে, তাহলে খালেদা জিয়া কেন ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে মানবতাবিরোধীদের সংসদে বসার পথ তৈরি করেছিলেন?,’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
‘তারা (জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া) সর্বদা সন্ত্রাসবাদ ও হত্যার সাথে জড়িতদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পাশে ছিল তারাও আমাদের বিজয় মেনে নিতে পারেনি, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। যেদিন আমরা বিজয় অর্জন করি সেদিন থেকেই আমাদের বিজয়ের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল।’
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনি ফারুক ও রশিদ তাদের বিবৃতিতে বলেছিলেন যে জিয়াউর রহমান সবসময় তাদের সাথে ছিলেন এবং এই ঘাতকদের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত হয়েই জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন।’
‘জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসাবে নির্বাচন করে খন্দকার মোস্তাক প্রমাণ করেছিলেন যে তারা একসাথে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তার সরকার ওই হামলার সাথে জড়িত ছিল এবং এজন্যই হামলার পরপরই পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করা মানুষদের ওপর লাঠিচার্জ করেছিল। এমনকি হতাহতেদের হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বাধা দেয়া হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অগ্রযাত্রা থমকে গেছে। তবে সরকার অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য দেশকে পুনরায় আগের পথে রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
‘আমাদের একটি লক্ষ্য রয়েছে এবং তা হলো জাতির পিতার আদর্শকে বাস্তবায়ন করা, যার জন্য তিনি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করব,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
ভার্চুয়ালি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত 'মুক্তির মহানায়ক' শীর্ষক চিত্রকর্ম ও চিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এসময় প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহার রচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।