দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত 'ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নবনির্মিত পাইপলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং মোদি নয়াদিল্লিতে তার কার্যালয় থেকে সংযুক্ত ছিলেন।
পাইপলাইনের মধ্যে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং বাকি ৫ কিলোমিটার ভারতে বসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে পাইপলাইনে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু: প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিপিসি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তির আওতায় দেশটি থেকে আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর আড়াই লাখ টন থেকে চার লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির অনুমোদনের পর চুক্তিটি সই করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে বছরে ছয় দশমিক ৬০ মিলিয়ন টন থেকে সাত দশমিক ৭০ মিলিয়ন টন ডিজেল আমদানি করতে হয়।
সরকারি নথি অনুসারে, পেট্রোলিয়ামের পুরো চালানটি উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের গোলাঘাটে অবস্থিত ভারতের নুমালিগড় শোধনাগার থেকে আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে আসবে। বাংলাদেশ উত্তর-পশ্চিমের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ডিপোতে পাবে।
সরকারি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত পাইপলাইনের বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশের অংশে বসানোর কথা থাকলেও ভারত সরকার বাংলাদেশ অংশটি নির্মাণের জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এর অধীনে প্রায় ৩০৩ কোটি রুপি ঋণ দিয়েছে।
বাংলাদেশ তার অংশে পাইপলাইন পরিচালনা করবে এবং ভারত তার অংশে পাইপলাইন পরিচালনা করবে।
নথিগুলো থেকে আরও জানা যায যে বাংলাদেশ প্রথম তিন বছরে বার্ষিক দুই লাখ ৫০ হাজার টন, চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বছরে বার্ষিক তিন লাখ টন, সপ্তম থেকে দশম বছরে বার্ষিক সাড়ে তিন লাখ টন এবং ১১তম থেকে ১৫তম বছর পর্যন্ত বার্ষিক চার লাখ টন আমদানি করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়াগন ব্যবহার করে প্রতি মাসে ২২ হাজার টন ডিজেল আমদানি করছে।
চুক্তিটি আরও সময়ের জন্য বাড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দিনাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন: নসরুল হামিদ
আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে এই ধরনের পেট্রোলিয়াম আমদানি দেশের সেই অংশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে উত্তরাঞ্চলে পেট্রোলিয়ামের মজুদ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের কার্যক্রম ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি পরিবহনের একটি টেকসই, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ-বান্ধব মোড তৈরি করবে।
এটি দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা আরও বাড়াবে।
এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি পাইপলাইন, যা আনুমানিক ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত। যার মধ্যে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাইপলাইনের বাংলাদেশ অংশ অনুদান সহায়তার অধীনে ভারত সরকার বহন করেছে।
পাইপলাইনটির বার্ষিক এস মিলিয়ন টন হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) পরিবহনের ক্ষমতা রয়েছে।
এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় প্রাথমিকভাবে এইচএসডি সরবরাহ করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন ডিজেল পরিবহনের ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে: নয়া দিল্লি