তাদের পেশাগত প্রয়োজনে ব্যাংক লোন, শিশুদের স্কুলে ভর্তি, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা ধরনের কাজের সমস্যা সমাধানে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড’ দেয়ার জন্য সরকারের আইসিটি বিভাগ, স্টার্টআপ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) যৌথভাবে কাজ করছে।
ফ্রিল্যান্সারদের কাজের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কাজ করে যাওয়া বিএফডিএসের চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান জানান, এ খাত থেকে দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এরই মধ্যে আট হাজার ফ্রিল্যান্সার বিএফডিএস সাইটে নিবন্ধন করেছেন। ধীরে ধীরে দেশের সব ফ্রিল্যান্সার যুক্ত হবেন বলে আশা তার।
নিবন্ধন করবেন যেভাবে
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য প্রথমে freelancers.gov.bd লিংকে ঢুকতে হবে। নাম (এনআইডি অনুসারে), ই-মেইল, মোবাইল আর আট অক্ষরের পাসওয়ার্ড দিয়ে এখানে নিবন্ধন করা যাবে। অ্যাকাউন্ট সাইনআপ করার সময় ই-মেইল ভেরিফাই করতে বলা হবে। ভেরিফিকেশন শেষে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করা যাবে।
লগইন করার পরের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আসা ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি’ বাটনে ক্লিক করা হলে চার ধাপের একটি ফরম আসবে।
প্রথম ধাপে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি চাওয়া হয় ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য), ফোন নম্বর দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ফ্রিল্যান্সারকে তার কাজের যাবতীয় তথ্য এবং সর্বশেষ ১২ মাসের আয়ের পরিমাণ জমা দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপে ক্যারিয়ার বিষয়ক আরও কিছু তথ্য দিতে হয় এবং সর্বশেষে চতুর্থ ধাপে ছবি সংযুক্ত করতে হয়।
বলে রাখা ভালো, যেহেতু এসব তথ্য ব্যক্তির এনআইডির বিপরীতে যাচাই হবে, তাই এমন ছবি নির্বাচন করতে হবে যেন এনআইডিতে থাকা ছবির সাথে ওয়েবসাইটে সংযুক্ত ছবির মিল থাকে। আবেদন জমা দেয়ার সাত দিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ইমেইলের মাধ্যমে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কারা পাবেন
নিজেকে ফ্রিল্যান্সার দাবি করে চাইলেই যে কেউ ফ্রিল্যান্সার আইডি নিতে পারবেন না। এ জন্য নির্দিষ্ট চার শর্ত পূরণ করতে হবে আবেদনকারীকে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, শেষ ১২ মাসে অন্তত এক হাজার ইউএস ডলার আয় থাকতে হবে, অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ করার ও আয় করার প্রমাণ এবং সঠিক পথে আয় দেশে নিয়ে আসার তথ্য থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সারের আয়ের তথ্যটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করা হবে। আয় এক হাজার ডলার বলা হলে আর ব্যাংক বা আয়ের কোনো মাধ্যমে সেই ডলারের হিসাব না থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। তাই কোনোভাবেই ভুল তথ্য দেয়া যাবে না।
অনেকে আবার মার্কেট প্লেসে কাজ করেন না। তবে ফ্রিল্যান্সার সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিদেশে থাকা ক্লায়েন্ট কত টাকা কীভাবে পাঠিয়েছে, তার স্টেটমেন্ট দিতে হবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে সাত কর্মদিবসের মধ্যেই ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করা হবে। তথ্য নিশ্চিত করতে আবেদনকারী ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে ভিডিও কল বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করা হতে পারে। উপার্জনের প্রমাণ হিসেবে যে কোনো কাগজ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হতে পারে।
যদি কেউ মার্কেট প্লেস বা সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ না করে থাকেন, স্থানীয় কারও অধীনে কাজ করেন তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন; সে ক্ষেত্রে তারা ফ্রিল্যান্সারের টিম মেম্বার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
তবে, উপরের উল্লেখিত চার শর্তের সবগুলো পূরণ হলেই কেবল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
নিবন্ধন ফি
ফ্রিল্যান্সার নিবন্ধন ফি ১৫০০ টাকা, যা কার্ড বা এমএফএসে পরিশোধ করা যাবে। প্রতি ১২ মাসে একবার তথ্য হালনাগাদ করতে হবে এবং হালনাগাদ ফি হিসেবে প্রতি বছর ১৫০০ টাকা দিতে হবে।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডে যে সব সুবিধা পাওয়া যাবে
সরকার নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দিয়ে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়া, পাসপোর্ট-ভিসা ও সরকারি সব খাতে আবেদন করতে পারবেন দেশের ফিল্যান্সাররা। এছাড়া ভবিষ্যতে আইটি খাতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এ আইডি কাজে লাগবে।
শিগগিরই freelancers.gov.bd ওয়েব পোর্টাল ও অ্যাপে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আরও কিছু ফিচার যুক্ত করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে- টিউটোরিয়াল হাব, মেন্টর মার্কেট প্লেস, ফ্রিল্যান্সার ইভেন্টস, ফ্রিল্যান্সার্স ব্যাংকিং ও ফ্রিল্যান্সার্স ওয়েলফেয়ার কমিউনিটি।
ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত সুবিধার দেয়ার পাশাপাশি ফ্রিলান্সার আইডি কার্ড সরকারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসাবে বিবেচিত হবে। বর্তমানে সমগ্রিকভাবে ফ্রিলান্সারদের আয়ের ব্যাপারে কমবেশি তথ্য জানা থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি কোনো পর্যায়ে দেশব্যাপী ফ্রিলান্সিং পেশার বাস্তব চিত্র ও বিস্তারিত তথ্য কারওে কাছে নেই। ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেশের ফ্রিল্যাসিংয়ের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।