একাধিক গল্প নিয়ে একটি সিনেমা; এক কথায় যাকে অমনিবাস চলচ্চিত্র বা ইংরেজিতে অ্যান্থলজি ফিল্ম বলা হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এ ধরনের শিল্প সবেমাত্র ডানা মেলতে শুরু করেছে। ২০১৮ সালের ‘ইতি তোমারই ঢাকা’র পর চলতি বছর চরকি অরিজিনাল ‘ঊনলৌকিক’ বেশ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বিজয়ের মাস জুড়ে চরকি মুক্তি দিচ্ছে তিন গল্পের অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘জাগো বাহে’। চলুন, ওয়েব ফিল্মটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
জাগো বাহে: চিত্রনাট্যে বায়ান্ন, সত্তর ও একাত্তর
অমনিবাস চলচ্চিত্রটির তিনটি গল্পের প্রথমটির শিরোনাম ‘শব্দের খোয়াব’, যেটি নির্মিত হয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন মুখর একটি দিনে অফিসগামী ইলিয়াস সাহেব অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন- অফিসে এখন থেকে উর্দু চলবে। বসের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে বেকায়দায় পড়ে চাকরি বাঁচাতে তিনি উর্দু শেখা শুরু করেন।
অন্যদিকে তুচ্ছ কারণে অফিস থেকে বাঙালি কর্মচারিদের চাকরি চলে যাবার ঘটনা বাড়তেই থাকে। এ অবস্থায় মনে চাকরি হারাবার ভয় নিয়ে এক অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ইলিয়াস সাহেব।
আরও পড়ুন: সিয়াম আহমেদ অভিনীত ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমার শুভমুক্তি
দ্বিতীয় গল্পটির নাম ‘লাইট্স, ক্যামেরা.. অবজেকশন’, যার পুরোটিই সাম্প্রদায়িক চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এবং অসাম্প্রদায়িক চলচ্চিত্র নির্মাতার মধ্যকার সংলাপ নিয়ে বানানো হয়েছে। ১৯৭০ সালে শ্রেষ্ঠ ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’ সেন্সর বোর্ডে আটকে যাওয়ায় নিজের মুক্ত সৃজনশীলতা চর্চা নিয়ে সেন্সর বোর্ডের সাথে যুক্তি তর্কে জড়িয়ে পড়েন কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান। সেই কথোপোকথোনটিই উঠে এসেছে এই গল্পে।
শেষ গল্পটি হলো ‘বাংকার বয়’। প্রেক্ষাপটটা ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ করার সময়। একজন পাকিস্তানি সৈন্য এবং ভারতের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া এক আঠারো বছরের তরুণ-এর এক হৃদয়বিদারক গল্প নিয়ে আবর্তিত হয়েছে এই গল্প।
‘জাগো বাহে’ অমনিবাস চলচ্চিত্রের রূপকারদের কথা
‘শব্দের খোয়াব’-এর পরিচালক সিদ্দিক আহমেদ, ‘লাইটস, ক্যামেরা... অবজেকশন’-এর নির্দেশনায় ছিলেন সালেহ সোবহান অনীম এবং ‘বাংকার বয়’-এর পরিচালনা করেছেন সুকর্ণ শাহেদ ধীমান।
আরও পড়ুন: ৩০ ডিসেম্বর থেকে ‘চরকি’তে দেখা যাবে ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’
গত ৭ ডিসেম্বর একসাথে মুক্তি দেয়া হয় ‘জাগো বাহে’র তিনটি গল্পের আলাদা পোস্টার ও টিজার, ট্রেইলার। চরকি অরিজিনাল হিসেবে পর্ব তিনটির মুক্তির দিন ঠিক হয় ক্রমান্বয়ে ডিসেম্বরের ৯, ১৬ ও ২৩ তারিখ।
চরকির সাথে যৌথভাবে নগদের ব্যানারে প্রকাশিত হচ্ছে এই অমনিবাস চলচ্চিত্রটি।
মুভি সিরিজটির শ্যুটিংয়ের সময় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল ৫২, ৭০ ও ৭১ এর সময়টাকে ফ্রেম বন্দি করা। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে চারপাশের পুরো পরিবেশটাই পাল্টে গেছে। তাই প্রতিটি সেট নতুন করে সাজিয়ে নিতে হয়েছে।