কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই ক্ষতি। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার। নিজের কিংবা সব হারিয়ে অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর।
গত বছর ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার, ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, ৪ হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ডুবে গিয়েছিল। এর ভেতর ৭০ পরিবারকে সরকারিভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে।
আম্পানের রাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি, মৎস্য ঘের, বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আম্পানের তাণ্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুঁপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। এখন বেড়িবাঁধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি সর্বহারা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের মাথা গোজার মত ঠাঁই রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে স্বপ্ন দেখছেন বসবাস করার। তবে অনেকেই এখনো রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে রয়েছেন। এসব ইউনিয়নের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আম্পানের এক বছরে আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা, জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় হাটতে হয় মানুষকে। কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২ লাখ ২৭ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০টি পরিবার নিজ নিজ প্রচেষ্টায় মাথা তুলে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের কেউ সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে গৃহনির্মাণ সুবিধা পায়নি। অনেকেই বাঁধের ঢালে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করছে। আবার অনেক পরিবার শূণ্য ভিটায় নতুন ঘর তোলার চেষ্টা করছেন।
ওই গ্রামের মিজানুর মোল্লা বলেন, ‘আমাগের দুরাবস্থার শেষ নেই। আমাগের দুরাবস্থা আমরাই কাটাতি পারতাম যদি বাঁধগুলি ভালভাবে মেরামত করা যেত। বাঁধ মেরামত না হলি, চাইলেও এ দুরাবস্থা কাটানো সম্ভব হবে না।’
দেখা গেছে, আম্পানে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল বাঁধ অনেক স্থানে মেরামত করা হয়নি। গত অমাবস্যার জোয়ারে দুর্বল বাঁধ ছাপিয়ে অনেক স্থানে পানি ঢোকে। এতে এলাকার মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, আম্পানে ভেঙে যাওয়া ২১টি স্থানে মেরামতের পাশপাশি ১৫ কিলোমিটার বাঁধে মাটির কাজ ও বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকার মনিরুজ্জামান মুকুলের স্ত্রী বলেন, ৫টি ছাগল, ১৫-১৬টি হাঁস ও ১০টি মুরগি ছিল। ঝড়ের রাতে আমরা পাশের একজনের বাড়িতে ছিলাম। পরে এসে দেখি শুধু পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। সব নদীর পানিতে ভেসে গেছে। পরে রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে কোন রকমে একটি ঘর বেধে থাকছি। সব সময় আতঙ্কে থাকি। এর আগে চারবার ভেঙ্গে আমাদের সব জমি নদীতে চলে গেছে।
তিনি বলেন, এক বছরে সরকারি কোন সহায়তা পাইনি। ৩০ কেজি কার্ডের জন্য অনেক হাত পা ধরার পরেও হয়নি। শুধু একটি এনজিও থেকে ৩ হাজার টাকা পেয়েছি।
কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় সবটুকু জমি বছরে বছরে