দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দানকারী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা ও জ্বালানি সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে স্বল্প কার্বন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেশের দুর্বলতাকে সহনশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী কপ-২৮ এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ২০০৯ সালে আমাদের নিজস্ব সীমিত সম্পদ থেকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। এখন পর্যন্ত, আমরা ৪৯০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি যা ৮৫০ টিরও বেশি প্রকল্পকে সহায়তা করে। এছাড়াও 'আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকার জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করার,’ কথাও তুলে ধরেন শাহাব উদ্দিন।
গত বছর বাংলাদেশ ইউএনএফসিসিসিতে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা জমা দেয়। ন্যাপ ২০২৩ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা সহ ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের জন্য ১১৩টি হস্তক্ষেপ চিহ্নিত করেছে। এই অগ্রাধিকারমূলক হস্তক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এর অর্থ ন্যাপ বাস্তবায়নে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঘাটতি থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) তিনগুণ বর্ধিত নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে হালনাগাদ করেছে।
আরও পড়ুন: পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে পৃথিবী: বিজ্ঞানীদের সতর্কতা
শাহাব উদ্দিন বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন 'সম্প্রতি প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আমরা ভুল পথে এগোচ্ছি। ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের অঙ্গীকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্য বজায় রাখতে সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, কপ-২৮-এ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতি অপরিহার্য হবে-
‘আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এমনকি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সীমার অস্থায়ী ওভারশ্যুট অভিযোজন সীমা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত স্থায়ী ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। নির্গমন ব্যবধান মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রধান নির্গমনকারীদের দ্বারা দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।’
‘প্রথম গ্লোবাল স্টকটেককে অবশ্যই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ফলাফলের বিপরীতে অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট মাইলফলকও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট: অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান
‘ন্যাপ এবং এনডিসি বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলো - এলডিসি এবং এসআইডিএস - জনসাধারণের উৎস থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান সংগ্রহ করা। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ২০১৯ সালের স্তর থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করার জন্য কপ-২৬ এর আহ্বান পূরণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার অনুযায়ী বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়ন সম্পর্কিত নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোলসের অধীনে ২০২৫ পরবর্তী অর্থায়ন অবশ্যই সবচেয়ে দুর্বলদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে এবং বাস্তবায়নের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সহ বর্তমান প্রতিশ্রুতির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের চরম হুমকি মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে একটি নিরাপদ ও উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি কপ-২৮ উদ্বোধনের প্রথম দিনেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইতিহাস সৃষ্টির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার ও জনগণ এবং কপ-২৮ সভাপতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
২০২৩ সালের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) গত ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ে শুরু হয়েছে এবং ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক