আড়ও পড়ুন: বাংলাদেশে ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত: আইইডিসিআর
হাসপাতালগুলোর ‘টপ ফ্লোরে’ সেই ওয়ার্ডগুলো করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোগী বেশি হয়ে গেলে কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলার হাসপাতালে দুটি করে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) যাতে থাকে, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো রোগীর খোঁজ পেলেই কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের প্রস্তুতির সার্বিক দিক নিয়ে ইউএনবি’র সাথে আলোপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আমাদের মেডিকেল টিম রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে যারাই আসছেন তাদের তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশি যারা বিদেশে চাকুরি করেন, তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশে আসবেন না বা যাবেন না। যাতায়াতটা সীমিত করতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে অনেক অনুষ্ঠান বাদ দেয়া হয়েছে।’
আড়ও পড়ুন: করোনা থেকে আপনার সন্তানকে বাঁচাতে করণীয়
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অন্য দেশ যেভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে, আমরাও সেভাবে ব্যবস্হা নিবো। তবে না ছড়ানোর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়ানো রোধে সরকারের ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু একটি স্পেশাল হসপিটাল তৈরি রেখেছি। সে হসপিটাল থেকে চিকিৎসা দিলে ভাইরাসটি ছড়াবে না। সেখানে অন্য কোন বিষয়ের রোগী বা মানুষ যেতে পারবে না। ফলে ছড়ানোর আশঙ্কা কম।’
আড়ও পড়ুন: করোনাভাইরাস: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও আরও তথ্য
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য চীন বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা স্বরুপ ৫০০ কিটস দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরও ২ হাজার কিটস রয়েছে। সব মিলিয়ে আড়াই হাজার কিটস হলো। কিটসের কোনো অভাব হবে না।
আরও কিটস পাইপ লাইনে আছে এবং করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারের কাছে ৮টি মেশিন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় চীনের অভিজ্ঞতা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা একটি ট্রিটম্যান্ট প্রটোকল তৈরি করেছি। চীন সরকারও তাদের দেশে ট্রিটমেন্ট প্রটোকল আমাদের দিয়েছে। সে অভিজ্ঞতাও আমরা কাজে লাগাবো।’
সংকট মোকাবেলায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সকল ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জনদের এলার্ট থাকতে বলা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।’
আড়ও পড়ুন: করোনাভাইরাস: যাদের ঝুঁকি বেশি, শরীরে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। যেহেতু এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ায় সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনসহ অভিজ্ঞ দেশের সাথে পরামর্শ করে এক যোগে কাজ করবো।’
‘প্রতিনিয়ত দেশের সকল সিভিল সার্জনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ধরনের লক্ষণ পাওয়া গেলেই দ্রুত পরীক্ষা করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং একজন নারী, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
তথ্য কেন্দ্র ও ২৪ ঘণ্টার হটলাইন: আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক (ডা.) মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিষয়ে সকল তথ্য সংগ্রহ, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য আইইডিসিআরে একটি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।’
আড়ও পড়ুন: করোনাভাইরাস: মাস্ক পরে কি সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব?
এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (ইউএসসিডিসি) দেশি- বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই, আমরা প্রস্তুত আছি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারন নেই।’
আইইডিসিআর পরিচালক জানান, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে জানতে চালু করা হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
হটলাইনগুলো হচ্ছে- ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫।
৬ দেশ থেকে দেশে ফেরাদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস ঠেকাতে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সিঙ্গাপুর, ও থাইল্যান্ড এই ৬টি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন হোম/সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, এটি সরকারের অনুরোধ।’
তিনি আরও বলেন, উল্লেখিত দেশগুলোকে থেকে আসা যাত্রীদের শরীরে জ্বর না থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ বাড়িতে বা তারা যেখানে থাকবেন, সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
‘তবে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় যদি যাত্রীর শরীরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে তাকে সরাসরি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস নিয়ে যত ভুল ধারণা