কুড়িগ্রাম সদরের চর সারডোবের দেলোয়ার হোসেনের মতো এমন অনেক কৃষকের কপালেই এখন আসন্ন খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় চিন্তার ভাঁজ। বন্যার ঢল, ভাঙন ও বাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রামে কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ঢেকে গেছে বালুতে। এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা অভাব মোচন করলেও এ বছর আমন চাষ করতে না পেরে খাদ্য সংকটের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
সারডোব গ্রামে মধ্য জুলাইয়ে একটি বিকল্প বাঁধ ভাঙার কারণে শত শত একর আবাদি জমি ৩-৫ ফুট বালুতে ঢেকে গেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী জয়কুমর ও হলোখানা গ্রামেও। এসব এলাকার কৃষকরা এবার আমন চাষ করতে পারেননি। পাশাপাশি বালুতে ঢেকে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে পাট, কলা, সবজি ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
হলোখানা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, গত বছর নব জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হলেও এবার সেগুলো বালুতে ঢাকা পড়েছে। এসব জমিতে আগামী কয়েক বছরেও ফসল ফলানো যাবে কি না তা নিয়ে দুঃচিন্তা রয়েছে। একই অবস্থা স্থানীয় অনেক কৃষকের।
বালুর কারণে আবাদ না হওয়ায় কৃষক ও দিনমজুর পরিবারগুলোতে আসন্ন খাদ্য সংকটের দুশ্চিন্তা ভর করেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা চান বালুজমিতে চাষের উপযোগী মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু ও ভুট্টার মতো ফসল চাষ করতে। এ ক্ষেত্রে রয়েছে পুঁজির সংকট। সংকট মেটাতে তাই সরকারি সহায়তা চান তারা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা: এখনও খোলা আকাশের নিচে ৫ শতাধিক পরিবার
সারডোব গ্রামের কৃষক দুখু মিয়া বলেন, ‘হামার টাকা পয়সা নাই। সরকার সাহায্য করলে হামরা মিষ্টি কুমড়া আর ভুট্টা আবাদ করলোং হয়।’
ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি রাবেয়া বেগম জানান, বালুজমিতে ফসল ফলাতে প্রচুর সেচের পানি দরকার। বর্তমান অবস্থায় তাদের পক্ষে সেচের অর্থ জোগার করা সম্ভব হচ্ছে না।
একই গ্রামের কনছার আলী জানান, নদী ভাঙনের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এ গ্রামের অনেকেই। তার ওপর বন্যায় পাট নষ্ট ও জমিতে বালুর কারণে আমন রোপন করতে না পারায় এ এলাকার ঘরে ঘরে এখন হাহাকার।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বন্যা পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ২০০ কৃষককে এক বিঘা করে জমিতে মাসকালাই চাষ করার জন্য বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
এছাড়া, প্রায় সাত হাজার কৃষককে আমনের চারা ও ১০ হাজার কৃষককে শাকসবজির বীজ দেয়া হলেও, বালুজমিতে চাষযোগ্য ফসল আবাদের জন্য এখনও কোনো বরাদ্দ আসেনি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, বন্যায় জমি অনাবাদি ও ফসল নষ্টের বিষয়টি তারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কৃষি প্রণোদনার কোনো বরাদ্দ আসলে ক্ষতি পোষাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।