চাষিরা জানান, এ রোগটি গরুর মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং জেলার পাঁচ উপজেলায় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে দুধ ও মাংসের উৎপাদন।
খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হওয়ায় প্রতি বছর অসংখ্য পশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে বিশেষ করে বাছুর বেশির ভাগই মারা যায়। রোগাক্রান্ত পশু সুস্থ হলেও কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায় না, ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। দুধ ও মাংসের উৎপাদনও হ্রাস পায়। এছাড়া গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত হয় এবং বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। ওলানের প্রদাহ হলে গাভীর দুধ দেয়ার ক্ষমতা চিরতরে লোপ পায়।
গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগে উদ্বিগ্ন ফরিদপুরের খামারিরা
খুরা রোগ নিরাময় এবং গবাদিপশুর স্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক সরবরাহ করলেও, গেল আগস্টে পবিত্র ঈদুল-আযহার পর থেকেই খুরা রোগের প্রাদুর্ভাবে খুলনার পাঁচ উপজেলায় গরুর দুধ ও মাংসের উৎপান কমেছে। কৃষকদের দাবি, এর ফলে প্রতি মাসে দুধের উৎপাদন গড়ে তিন হাজার মেট্টিক টন এবং মাংসের উৎপাদন কমেছে দুই হাজার মেট্টিক টন করে।
গত ঈদুল-আযহা উৎসব চলাকালীন ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা হরিয়ানা জাতের গরু থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুরা রোগ ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আওয়াল বলেন, ‘খামারিদের অসচেতনতার কারণে জলাবদ্ধ এলাকায় রোগাক্রান্ত গরু বেঁধে রাখায় খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা ও দিঘলিয়া উপজেলায় খুরা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কোরবানি ছাড়াও বর্ষা মৌসুমের আগে ও পরে খুরা রোগ দেখা দেয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় এ রোগে মহামারি আকারে ধারণ করেনি।’
গবাদি পশু ও দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের সাথে ৫০ কোটি ডলারের চুক্তি
চাহিদা মেটাতে দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু থাকায় গত বছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভারত এবং মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে গবাদিপশুর প্রবেশ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে লকডাউন চলাকালীন দিঘলিয়া, তেরখাদা, রূপসা, ডুমুরিয়া ও ফুলতলার খামারিরা কাঙ্ক্ষিত দামে দুধ বিক্রি করতে পারেননি। খুলনা জেলায় বছরে আড়াই লাখ টন গরুর দুধ ও এক লাখ ৫৪ হাজার মেট্টিক টন মাংসের উৎপাদন হয়। তবে খুরা রোগের কারণে এ বছর ৩৬ হাজার মেট্টিক টন দুধ এবং ২৪ হাজার মেট্টিক টন মাংসের উৎপাদন কম হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশু চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কৃষকদের দাবি ‘এ অনুদান অপর্যাপ্ত’।
আরও পড়ুন: খুলনায় গরুর খামারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে গরুসহ ১৪টি ঘর