পাঁচ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার ফরদিপুর পৌরসভার সড়কগুলো সংস্কারে গত চার বছরে নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সড়কগুলোতে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।  

জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে ২২.৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ফরিদপুর শহরকে ৯টি ওয়ার্ড  নিয়ে পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালে এই পৌরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে এবং ১৯৮৬ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতী হয়।

বর্তমানে ৬৬.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে ফরিদপুর পৌরসভা কাজ চলছে। ২০০৯ সালে পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৭ জন। ২০১৯  সালের হিসেবে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় পাঁচ লাখ ৫৭ লাখ ৬৩১ জন।

এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য পৌরসভার মালিকানাধীন সড়ক রয়েছে ৪৪৫ কিলোমিটারের ২৮টি সড়ক। এর মধ্যে ১২৫ কিলোমিটারের ১৬টি সড়কের অবস্থা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দীর্ঘ সময় সংস্কার না হওয়া সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সড়ক অম্বিকা চরণ মজুমদার সড়ক। এটি ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার জেলা পরিষদের ডাকবাংলো থেকে শুরু হয়ে মহাকালী পাঠশালার মোড়ে গিয়ে মিশেছে। 

ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি চরকলাপুর ও পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট জোড়া সেতু হয়ে শহরে প্রবেশের জন্য একটি সংযোগ সড়ক হিসেবেও কাজ করে।

এই সড়কের পুরো অংশে ছোট বড় গর্ত হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, অনেকদিন হলো সড়কটি মেরামত হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বের হয়েই সড়কে নেমে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। 

পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সুফি আব্দুল বারি সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে আছে। ওই এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার দুলাল হোসেন বলেন, কয়েক বছর হলো সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না। খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, বৃষ্টি হলে আর চলাচলের উপায় থাকে না।

পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার কানিজ সড়কে তিনশ মিটার অংশ সংস্কার না করায় ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক গাজী মোকসেদুর রহমান (৬৫) বলেন, সড়কটি নিয়ে বিপদে রয়েছি। এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার। পৌরকর বাড়ছে, নাগরিক সুবিধা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।

পড়ুন: অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু

পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের বাড়ি থেকে চুনাঘাট সেতু পর্যন্ত বেড়ি বাধের উপর নির্মিত একটি সড়কটি চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চুনাঘাটা সেতু থেকে আদমপুরগামী সড়কটির বেহলা দশা। অম্বিকাপুর রেল ক্রসিং থেকে শুরু করে ভাসানচরগামী সড়কে চলাচল করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে।

এলাকার বাসিন্দা আশিষ পোদ্দার বলেন, সড়কটির জন্য এলাকায় বাস করা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কটি পানির নিচে ডুবে যায়।

শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজার ও কোতোয়ালি থানার সামনের গুরুত্বপূর্ণ থানা রোড নামের সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে আছে। বাজারগামী যাত্রী ও পথচারীদের এ জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পৌসভার মোট পাকা সড়কের পরিমাণ ৪৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার বেহাল। এছাড়াও বর্তমানে পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পাকা সড়ক আছে আরও প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। ২০১৮ সাল থেকে ওই সব সড়কে কোন উন্নয়ন কাজ করছে না এলজিইডি। মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য পৌরসভার মত বছরে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল থেকে কোন নতুন প্রকল্প শুরু হয়নি। পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে সম্প্রতি ছোট বড় মিলিয়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ দ্রুত শুরু হতে যাচ্ছে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম জানান, মেডিকেল কলেজ থেকে অনাথের মোড় পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। মমিন ম্যানশন থেকে অম্বিকা সড়কসহ রাজেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত সড়কের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ বেহাল সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পৌরসভা সড়কগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশকিছু সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় ও বৃষ্টির মৌসুমের কারণে সংস্কার কাজে একটু ধীরগতিতে এগুচ্ছে। 

তিনি বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়েছি, সেটি হলে দ্রুতই সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।

পড়ুন: বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা