সংখ্যায় খুব কম হলেও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি স্বপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এই কাজ সবার কাছে যেমন সমাদৃত হয়েছে, পাশাপাশি প্রশংসিত হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
সম্প্রতি সরকারের চাল চুরি ও দুর্নীতি নিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তবে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির জনসেবামূলক উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে মানুষ।
পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর করোনা সংকটকালীন সময়ে সাধারণ জনগণের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের কনিষ্ঠতম উপজেলা চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ ঘরে থাকলেও তাদের আরও অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে শাক-সবজি অন্যতম। এসব সংগ্রহ করার জন্যই মানুষ হাট-বাজারে চলে আসে, জমায়েত করে।
তিনি বলেন, ‘আমি হাটমুখী, বাজারমুখী জনগণকে নিরুৎসাহিত করতেই এ কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে তারা নিরাপদে ঘরে থাকতে পারেন।’
উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি চাল, ত্রাণ বিতরণের পর নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ শুরু করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাইকিং করে শাক-সবজি বিতরণ করছেন এই জনপ্রতিনিধি।
অন্যদিকে মানুষদের মাঝে প্রয়োজনীয় সবজি ট্রাকে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের পাশাপাশি তিনি ওই ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন নিয়মিত।
নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাজধানীর শাহবাগ, পরীবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা, নীলক্ষেত, শিববাড়ী এলাকায় গত ৮ এপ্রিল থেকে তিনি এই কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে বাজার থেকে ট্রাকবোঝাই করে লাউ, পেপে, বেগুন, শাক, ডাটাসহ বিভিন্ন রকমের সবজি কিনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ। সেখান থেকে মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সবজি সংগ্রহ করছেন। যারা ঝুঁকি নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন না, তাদের জন্য বিনামূল্যে এই সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন এই কাউন্সিলর।
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমি সবার জন্যই এই সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছি, বিশেষ করে যারা বাজারে যেতে পারছে না। বাজারে জনসমাগম বেশি হলে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই মানুষ যেন কষ্ট হলেও কিছুদিন বাজারে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, সেজন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
এদিকে সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ ফখরুল আলম ত্রাণ সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি গত ১৩ এপ্রিল থেকে বিনামূল্যে সবজি বাজার শুরু করেন।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, প্রথম দিন (১৩ এপ্রিল) কয়েক শতাধিক দিন মজুর, রিকশাচালক, গৃহকর্মী এবং প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাছ, গরু ও মুরগির মাংস এবং বিভিন্ন প্রকার সবজি বিতরণ করা হয়।
সাধারণ মানুষের সুবিধা ও তাদেরকে নিরাপদে ঘরে রাখার জন্য এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চান তিনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছেন মোহাম্মদ ফখরুল আলম। শুরুতেই তিনি ইউনিয়ন ভিত্তিক ‘তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি’ এবং অন্তর্ভুক্ত ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন।
এ ব্যাপারে তিনি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ যেমন- আলেম সমাজ, শিক্ষক সমাজ, মসজিদের ইমাম, ব্যবসায়ী, সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সকলের সাথে পরামর্শ করেছেন, সবাইকে সচেতন করেছেন।
অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা, গণপরিবহন, রিকশা-ভ্যান ও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে তিনি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেন।
বিভিন্ন এলাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকের জন্য তিনি ও তার কমিটির সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন, যা এখনও চলমান আছে।
মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টনের মতো খাদ্যসামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, সাবান, কালোজিরা, শুকনা খাবার, বিস্কুটসহ জরুরি শিশুখাদ্য তরল দুধ, পাউডার দুধ, ডিম, ল্যাকটোজেন, চিনি, হরলিক্স ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির একটা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যার দুটি হটলাইন নম্বরে এলাকার মানুষকে ত্রাণ ও ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। খাদ্য সংকটে এমন কেউ ফোন দিলে তাদের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকে এবং সবসময় এখানে অপারেটররা সেবা দিচ্ছে।
এছাড়া হেমায়েতপুরে ফ্রি সবজি বাজার স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত যে কেউ বিনামূল্যে সবজি নিতে পারে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টনের ওপর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও বিতরণ করা হবে।
মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যের মাত্র সাড়ে চার টন সরকারি বরাদ্দ পেয়েছি। বাকি খাদ্য চেয়ারম্যানের বাবার নামীয় ‘ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে তহবিল গঠন করে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।