তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ প্রকল্প নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে কাজ তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা একটি কমিটিকে কেন্দ্র করে।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১০তলা বিশিষ্ট ছয়টি হলের কাজ দেখভালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৬ জন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ওই আদেশে বলা হয়েছে, ‘ছয়টি হলের জন্য কমিটির সদস্যরা কাজ করবেন। টেকনিক্যাল কমিটির সাথে এই কমিটির সদস্যরা হলের কাজের সাইট ভিজিট, রড বাঁধাই, ঢালাইয়ের কাজের গুণগত মান, সময়মতো কাজ সম্পাদন করা সহ হলের সার্বিক বিষয়াদি দেখবেন।’
কিন্তু এসব কাজ দেখভালের জন্য যে ১৬ জন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা কেউই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। এমনকি নির্মাণকাজ সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানও তাদের নেই। তারা সবাই সমাজবিজ্ঞান, কলা ও মানবিক অনুষদ এবং বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ থাকলেও ওই বিভাগের কোনো শিক্ষককেই কমিটিতে রাখা হয়নি। এমনকি বাইরে থেকে স্থাপত্য বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকেও রাখা হয়নি।
তবে, এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিন। আর রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে দেন।
এদিকে কাজ তদারকির জন্য যে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাদের অভিযোগ, হঠাৎ করে একটি চিঠি পাঠিয়ে কমিটিতে নাম দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এমনকি কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনাও তাদের সাথে করা হয়নি। এমনকি এখনও তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
ইতোমধ্যে ২১ নং হলের (ছাত্র হল) দায়িত্ব পাওয়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ এর সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে উপাচার্যকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি করোনাকালীন পরিস্থিতি, বয়স ও নির্মাণযজ্ঞ সম্পর্কে জ্ঞানের অপ্রতুলতা দেখিয়েছেন। একইভাবে, ওই হলেরই দায়িত্ব পাওয়া আইবিএ-জেইউ এর শিক্ষক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা জানিয়েছেন। এছাড়া কমিটির কমপক্ষে চারজন সদস্য দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে অন্যতম কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলী বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। করোনার এই সময় বাসার বাইরে খুব একটা যাই না। তাছাড়া আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞও না। তাই আমার পক্ষে এসব দেখাশুনা করা সম্ভব না। তাছাড়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি কাজ ঠিকমতো না করে, তার দায় আমার উপর বর্তাবে। তাই আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি।’
নির্মাণ কাজের অবস্থা সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন বলেন, ‘অফিস আদেশ পাওয়ার পরই দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এর আগে এ বিষয়ে কেউ আমার সাথে কথা বলেনি।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষক হয়ে নির্মাণ কাজের দেখভাল সঠিকভাবে করতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয়গুলো তো আমি বুঝব না, তার জন্য প্রকৌশলী আছেন; তারাই দেখবেন। আমি শুধু শ্রমিকরা কাজ করছে কি না এটা দেখেছি।’
পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি টিএসসির পরিচালক হিসেবে আছি। আমাকে টিএসসি সংশ্লিষ্ট একটি ভবনের দায়িত্ব দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন হলের দায়িত্ব দেয়া হলো সেটা আমার জানা নেই।’
সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ করা হচ্ছে। এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।
কমিটির সদস্যদের অজান্তেই তাদের নাম দেয়া হয়েছে এবং তাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি, এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কার নাম থাকবে আর থাকবে না তা আমার এখতিয়ারের মধ্যে নেই। এসব নাম ওপর থেকেই ঠিক করে দেয়া হয়েছে। আর চিঠিতে উল্লেখ করে দিয়েছি ওনাদের কাজ কি। তারপরও ওনারা যদি কোনো কিছু না বুঝেন তাহলে আমাদের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারবেন।’