ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলী হাসান কবির শিহাব প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা। তিনি নিজেও মাদকাসক্ত ছিলেন। মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নিজ জেলায় ফিরে এসে তার মতো অসংখ্য মাদকাসক্ত তরুণকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রটি চালু করেছেন তিনি।
প্রকৌশলী শিহাব কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে। এরপর একটি কারিগরি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন। হঠাৎ করেই তার রাজনীতি করার সখ হয়। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে ওঠা বসা করতে করতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। নিজের উপার্জনের সব টাকা চলে যেত নেশার পেছনেই। ক্রমশ পরিবারেও বোঝা হয়ে ওঠেন। উপায়ন্তর না দেখে তার ভগ্নিপতি ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান রানা নিজের মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে শিহাবকে ভর্তি করে দেন। দীর্ঘ আঠার মাস সেখানে অবস্থান করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন তিনি। আর অনুভব করেন একজন মাদকাসক্ত সন্তান একটি পরিবারের জন্য কতটা যন্ত্রণা বয়ে আনে। তাই তিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভগ্নিপতি মাহাবুবুর রহমান রানার সহযোগিতায় এ মাদকাসক্তি চিকিৎসা, সেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র গড়ে তোলেন ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে ১৫ থেকে ২৫ বছরের ১৯ মাদকাসক্ত তরুণ ভর্তি আছেন। প্রায় সবাই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাঁচজন স্টাফ আর তিনজন চিকিৎসক প্রয়োজন অনুসারে কাজ করেন এখানে। এছাড়াও মূলত স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা তরুণরাই কাজ করে থাকেন। তাদের ভাষায় এটা হচ্ছে ফেলোশিপ জার্নি। এদের অনেকের সাথেই কথা বলে দেখা গেছে সবাই সপ্রতিভ এবং বুদ্ধিদীপ্ত। প্রায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেন যে তারা তাদের অতীত কর্মকাণ্ডে অনুতপ্ত। এখান থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে তারা ফিরতে চান বলেও তারা জানান।
কেন্দ্রের পরিচালক শিহাব জানান, এখান থেকে অনেকেই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।
কেন্দ্রর কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানান, এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, ডিটক্সিফিকেশন, থেরাপিউটিকেল কমিউনিটি, সাইকো-এডুকেশন, অকুপেশনাল থেরাপি, রিক্রিয়েশনাল থেরাপি, আফটার কেয়ার ফলো-আপ সেবাগুলো দেয়া হয়ে থাকে।
খরচ সম্পর্কে শিহাব বলেন, ‘ঢাকা বা বড় শহরগুলোর এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক খরচ দিতে হলেও আমরা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই খরচের অংকটা রেখেছি। এখানে একজন নিবাসীর পেছনে মাসিক খরচ ২ হাজার হতে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। এ টাকায় থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসহ আনুসাঙ্গিক খরচ নির্বাহ করা হয়।’
‘যদি আমরা সামান্য পরিমাণে হলেও সরকারি সাহায্য পেতাম তবে আরও সুন্দরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হতাম,’ বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের পরিদর্শক শফিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি এসব মাদকাসক্তি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারিভাবে সাহায্য করার কোনো সুযোগ নেই। তবে পুনর্জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, সেটা হয়ে গেলেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারব।’
দেশের মাত্র একটি সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সারা দেশের মাদকসেবীর তুলনায় অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে এগিয়ে আসা কেন্দ্রগুলোর প্রতি সরকারি সহযোগিতা ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে মনে করেন এ পরিদর্শক।