সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের কান্দিরপাড়, রানীবাজার, বিশ্বরোড, রেইসকোর্স, রাজগঞ্জ, পুলিশ লাইন, শাসনগাছা, বাদশা মিয়া বাজার, ধর্মপুর, চকবাজার, মদিনা বাস স্টেশন, ঝাউতলা, ধর্মসাগর রোড, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, দৌলতপুর, ফৌজদারি, বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় তারে তারে জঞ্জাল হয়ে আছে।
কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন না নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিদ্যুত খুঁটি ব্যবহার করে দেদারছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি দিয়ে এলোমেলো বৈদ্যুতিক তার চাদরের মতো জড়িয়ে রেখেছে শহরের প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্যুত কর্মকর্তা জানান, যদিও তাদের লাইসেন্স দেয়ার সময় বলা থাকে যে সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব খুঁটি ব্যবহার করতে হবে। এ কথা তারা মেনে চলে না। লোকজনকে কাজ করতে এসে চরম বেগ পেতে হয়। এতে যেকোনো সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এই জটের কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে নগরীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বাহার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মামুন মিয়ার অভিযোগ, এমনিতে কান্দিরপাড় বৈদ্যুতিক ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। তার ওপর শহরে ফুটপাত ও মার্কেটগুলো সামনে তারের জটলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
নগরীরে রেইসকোর্সের বাসিন্দা সৌরভ মাহমুদ হারুন জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। যারা ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় জড়িত তারা প্রভাবশালী। অবাসিক এলাকাগুলোতে নিয়মের তোয়াক্কা না করে এইসব তার এলাকায় পরিবেশ নষ্ট ও ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, নগরে অপরিকল্পিত তারের জঞ্জালের কারণে ভবিষ্যতে বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটি শহরের পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুমিল্লা ক্যাবল টিভি ও নেটওয়ার্কের পরিচালক আফজল হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড থেকে মৌখিক অনুমোদন নিয়ে আমরা বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করছি। ইন্টারনেট ও সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো এসব তারের জঞ্জাল সৃষ্টি করে থাকে। সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা পেলে অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।’
কুমিল্লা পূর্বাঞ্চলের ডিস ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহারের জন্য অফিসের সাথে কারও লিখিত চুক্তিপত্র নেই। এখানে আমাদের তার ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদেরও তার আছে।’
বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদের খুঁটি ব্যবহার করলে বাৎসরিক ফির মাধ্যমে একটি চুক্তিপত্র করতে হয়, কিন্তু কুমিল্লায় কোনো সংস্থা আমাদের সাথে চুক্তি করেনি।
ক্যাবল নেটওয়ার্কের তার ব্যবহারে মৌখিক অনুমোদনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এই জঞ্জাল মাঝে মধ্যে আমরা অপসারণ করি। অচিরেই এগুলো অপসারণ করা হবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তারের জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে আগামী সপ্তাহ আমরা ইন্টারনেট সেবা ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক নেতাদের সাথে নিয়ে মিটিংয়ে বসবো। শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় নাগরিকদের সেবার কথা মাথায় রেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিলেট করপোরেশনের আদলে মাটির নিচ দিয়ে কীভাবে তারগুলো নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।