পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলনার পর্যটন খাতে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ইতোমধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাটের ১৭ স্থাপনা, সুন্দরবন ও কুয়াকাটাকে ঘিরে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে এবং কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সেতুর চালুর ফলে এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকাররি পর্যটন খাতের আয় ব্যাপ্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটিই বাগেরহাটে অবস্থিত। ইউনেস্কো ঘোষিত সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মজসিদসহ ১৭টি স্থাপন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক এসেছেন। এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় এসেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এক লাখ ৮০ হাজার দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
সুন্দরবন টুরিস্ট ক্লাবের শেখ শাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের দুর্ভোগে পড়তে হতো। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা রূপ একেবারেই পাল্টে যাবে। সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পও ঘুরে দাঁড়াবে।
মোংলার ট্রলার ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ইকো টুরিজমকেন্দ্র ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র করমজলকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা। মোংলা থেকে ট্রলার করে আধাঘণ্টায় করমজল যাওয়া যায়। কিন্তু সড়ক পথে ভোগান্তি থাকার কারণে দর্শনার্থী কম আসত। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুন্দরবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে সেই সঙ্গে আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা জয়মনির ঘোল এলাকার বিজন কুমার রায় বলেন, সুন্দরবনের কাছেই আমাদের বসবাস। তাই বন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে আমরা জড়িত। পদ্মা সেতুর চালুর ফলে সুন্দবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ফলে আমাদেরও ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে।
স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সোহেল হোসেন বলেন, বাগেরহাটে যে পরিমান দর্শনার্থী বর্তমানে ঘুরতে আসে, পদ্মা সেতুর ফলে সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। দর্শনার্থী বাড়লে গাইডের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
খানজাহান আলী (রহ.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান বলেন, পথের ভোগান্তির কারণে বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারণে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পদ্মা সেতু চালু ফলে বাগেরহাটে পর্যটকদের আগমন ঘটবে। হোটেল-মোটেল গুলোতেও চাপ থাকবে।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সেতুর ফলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু যে অমীত সম্ভাবনা দেখাচ্ছে তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারণার চেয়েও বেশি হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে খানজাহান আলী (রহ.) এর মাজার মোড়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে কয়েক গুণ বেশি পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো.আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি যাতায়েত ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি পদ্মা সেতুর হাত ধরে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এই খাতে ব্যাপক আর্থিক উন্নতি ঘটবে।