গত দুইবারের পৌর নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা। এবার ক্ষমতার পালাবদল হবে-নাকি আগের মতই হবে, সে নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বলছেন, উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। তাই নৌকার বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অপরদিকে, বিএনপির সমর্থকরা বলছেন, ধানের শীষের বিকল্প নেই। ভোট সুষ্ঠু হলে কেউ বিএনপির জয় ঠেকাতে পারবে না। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে ধানের শীষের প্রার্থী।
আরও পড়ুন: পৌর নির্বাচন: সিরাজগঞ্জে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী নিহত
পৌর নির্বাচন: ফেনীর দাগনভূঞায় ককটেল বিস্ফোরণে আহত ৩
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও বরাবরের মতই ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে।
মেয়র প্রার্থীরা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী (নৌকা), বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির ইয়ামিন হাসান ইমন (লাঙ্গল), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) তারিকুল ইসলাম (সিংহ) এবং ইসলামী আন্দোলনের মো. গোলমুর রহমান আজম (হাতপাখা)।
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই উৎসব বিরাজ করছে।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। শেষ পর্যায়ে জোর জবরদস্তির মাধ্যমে নির্বাচন করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে তিনি জয় লাভ করবেন।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ফেনীর উন্নয়নের কান্ডারি নিজাম হাজারী এমপির স্বপ্নের আধুনিক ফেনী পৌরসভা গড়তে কাজ করার লক্ষ্যে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’
শান্তি ও সহাবস্থানের ফেনীতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকলকে আগামী ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নৌকায় ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বপন মিয়াজী বলেন, ‘আপনাদের কাছে থেকে সেবা করতে চাই, আমি আপনাদের সন্তান। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা নিয়ে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আপনাদের সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে জয় লাভ করব ইনশাল্লাহ।’
ফেনী পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
নৌকার সমর্থনে প্রতিদিন ফেনী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পথসভায় ও বিকালে গণসংযোগ করেছেন।
এ সময় তারা নৌকা প্রতীক হাতে নিয়ে শহরে মিছিল করে এবং পৌর এলাকায় মাইকিং করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারণা করেন।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী প্রতিদিন তাদের শত শত নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। শহরের প্রাণ কেন্দ্র ট্রাংক রোড়, শহীদ শহীদুল্লাহ রোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রচুর পোস্টার দেখা যাচ্ছে। তাদের মাইকিংও শোনা যাচ্ছে।
প্রচারণায় পিছিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।
তিনি ফেনী পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে তিনি মতবিনিময় সভা করেন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় পর্যায়ে ৬৪ পৌরসভার নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি
চতুর্থ ধাপে ৫৬ পৌরসভায় ভোট ১৪ ফেব্রুয়ারি
পঞ্চম ধাপে ৩১ পৌরসভায় ভোট ২৮ ফেব্রুয়ারি
এছাড়াও ফেনী সদরের বড় বাজারে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করেন এবং মাইকে প্রচারণা চালান।
এছাড়া নিজেদের জয়ের ব্যাপারে অন্য প্রার্থীরাও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এনডিএমের মেয়র প্রার্থী তারিকুল ইসলাম নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভোটাররা তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখবে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে ইনশাল্লাহ জয়ী হব।’
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. গোলমুর রহমান আজম বলেন, ‘প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারলে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
জাতীয় পার্টির ইয়ামিন হাসান ইমন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করব।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, আগামী ৩০ জানুয়ারি ফেনী পৌর নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ১৮টি সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৬টি মহিলা কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পৌর ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১৩ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১, ২, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী থাকায় মোট ১৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ফেনী পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯১ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৭ হাজার ৩০৭ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ৩৫৫ জন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে ফেনী পৌরসভায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কিছু বিচ্ছিন্ন অভিযোগ এলেও বড় ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি।’