বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তাতে দেশের জিডিপিতে বছরে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে টানেলটি।
আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) টানেলটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে ইপিজেড মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি।পরদিন ২৯ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এটি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইউএনবিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণকে ঘিরে চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বা ‘এক নগর দুই শহর’-এর মডেলে গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের
সেতুমন্ত্রী বলেন, দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ পথে। নদীর মধ্য ভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ সড়কটি অবস্থান করবে মাটি থেকে ১৫০ ফুট গভীরে। এর নির্মাণকাজ শেষ করে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। এই সুড়ঙ্গ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম টানেল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে আগলে রেখেছে যে কর্ণফুলী, তার বুক চিরে তৈরি হয়েছে ৩ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ। দেশের এ প্রবেশদ্বারে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভিত্তি আরও মজবুত করতে আলাদা শক্তি জোগাবে এই টানেল। বাণিজ্যিক এই রাজধানীতে আরও স্থাপন হবে নতুন নতুন শিল্প ও কলকারখানা, পরিধি বাড়বে আমদানি-রপ্তানির, গতি পাবে অর্থনীতি। সমৃদ্ধির অধিগম্যতায় প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম।
কাদের বলেন, টানেলটি চালুর পর চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে সাগর ও বিমানবন্দরেরও দূরত্ব কমে আসবে। অর্থনীতির গতিপথ আরও গতিশীল করতে এই টানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে আমানত শাহ সেতু হয়ে যেতে অনেক সময় লাগত। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল হয়ে যেতে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের সে পথ তিন মিনিটেই যাওয়া যাবে। এতে বাঁচবে খরচ ও সময়।
২৯ অক্টোবর থেকে উন্মুক্ত
২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এটা কোনো সাধারণ ব্রিজ বা কালভার্ট নয়, এটা টানেল। থ্রি হুইলার, মোটরসাইকেল কোনোভাবেই টানেলে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থাকবে। সেখান থেকে সবকিছু মনিটর হবে। এফ এম রেডিওতে যেভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় বা তথ্য জানানো হয়, এখানেও সার্বক্ষণিকভাবে সেটা থাকবে। বিভিন্ন ধরনের কমেন্ট্রি দেওয়া হবে।’ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত টোল হার ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল টোল
বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য গত আগস্টে টোল হার চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), জিপ ও পিকআপকে দিতে হবে ২০০ টাকা করে। আর মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
টানেলে দিয়ে যেতে হলে ৫ টন পর্যন্ত ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ দশমিক ১ টন থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ দশমিক ১ টন থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তিন এক্সেলবিশিষ্ট ট্রাক-ট্রেইলরের টোল চূড়ান্ত করা হয়েছে ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রাক-ট্রেইলরকে দিতে হবে ১০০০ টাকা। এর বেশি ওজনের ট্রাক-ট্রেইলরকে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে পাইপলাইনে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু: প্রধানমন্ত্রী