জনশক্তি ও কর্মস্থান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া নারীদের ৭ থেকে ১০ শতাংশ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে দালাল ধরে বিদেশ গেছেন।
ফরিদপুরের সদরপুরের ভাষানচর এলাকার লাবলু সরদারের মেয়ে খাদিজা বেগম। চার মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে আত্মীয়ের প্ররোচনায় এক মেয়েকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা।
এ জন্য পাশের গ্রামের আদম ব্যবসায়ী আরিফ ফকিরের কাছে গেলে তিনি ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ১৫ হাজার টাকা বেতনে খাদিজাকে জর্ডানে গৃহকর্মীর কাজ দেয়ার আশ্বাস দেন। গত বছর ১৫ জুন খাদিজাকে জর্ডানে পাঠানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় আরিফ।
দেড় মাস পর খাদিজা তার পরিবারকে ফোনে জানান, ‘দালালরা তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সে কষ্টে আছে, বাঁচতে চায়।’
এরপর খাদিজাকে ফিরে পেতে তার বাবা মানবপাচার আইনে সদরপুর থানায় মামলা করেন।
প্রতারণায় শিকার খাদিজার বাবা লাবলু সরদার বলেন, আমার মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত পেতে চাই। সরকারসহ সকলের কাছে আমি সাহায্য চাই।
খাদিজার মতোই দালালের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন ভাঙ্গা উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা রহিমা বেগম। দুই সন্তান নিয়ে তিনি অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
রহিমা বেগম জানান, সংসারের অভাব মোচনের আশায় বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সেখানে ঠিকমতো খাবারও পাইনি। তাদের কথা না শুনলে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করত।
ফরিদপুর জেলা জনশক্তি ও কর্মস্থান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সরকারিভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গিয়েছেন ১০ হাজার ৬৬০ জন নারী শ্রমিক; যাদের অধিকাংশই গৃহকর্মী। প্রতারক দালালদের দারস্থ না হয়ে সরকারি মাধ্যমে বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জনশক্তি ও কর্মস্থান অফিসের সহকারী পরিচালক ষষ্ঠীপদ রায় জানান, অপ্রশিক্ষিত নারীরাই বিদেশে গিয়ে কাজ করতে সমস্যায় পড়ে। অনেক সময় দেশেও ফেরত আসতে হয়। এজেন্সিগুলো জালের মতো দালালদের ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতারণা বন্ধে দালালদের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আইডি কার্ড দিতে এজেন্সিগুলোকে বাধ্য করতে হবে।
ফরিদপুরের নারী উন্নয়নে কাজ করা সংস্থা বেনিফিসিয়ারি ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম জানিয়েছে, গত ছয় মাসে দুইটি উপজেলাতে (ভাঙ্গা ও সদরপুর) ২৫ জন নারীর সাথে প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন তারা; যাদের সবাই দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছিলো।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর বেনিফিসিয়ারি ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম নির্বাহী পরিচালক ফজলুল হাদী সাবির জানান, দালালদের মাধ্যমে যাওয়া, ওই দেশে ভাষা-সংস্কৃতি না জানায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ছে নারী। সঠিক কাজ পায় না, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
প্রতারিত নারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণে সচেতনতার অভাব থাকায় তাদের আইনি সহায়তা দেয়া কঠিন হয় বলে জানান বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টের কর্মকর্তারা।
ফরিদপুর ব্লাস্টের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদেশে গেলে ওই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। এতে প্রতারণার সম্ভাবনা কম। প্রতারণার পর অধিকাংশ নারীই সঠিক তথ্য ও কাগজপত্র দেখাতে পারেন না। যে কারণে দালালদের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া অনেক সময় কঠিন হয়।
প্রতারণা থেকে বাঁচতে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের দালালদের বাদ দিয়ে ভাষাসহ কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি সংস্থা ও নিবন্ধিত এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে যাওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টরা।