সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে থাকা দীর্ঘদিনের পুরানো গাছ ঝড়ে বা গাছের গুড়ি থেকে মাটি সরে যাওয়ায় উপড়ে আছে। কোনো কোনো গাছ আবার অতিরিক্ত ডালপালার ভারে হেলে বা উপড়ে পড়ছে। উপড়ে পড়া গাছগুলো সঠিক সময়ে নিয়ম অনুযায়ী নিলাম করা হলে ব্যাপকহারে সরকারের রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
সড়কের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে থাকা গাছগুলো উপড়ে পড়ছে। আর উপড়ে পড়ার পর সেই গাছগুলোর অর্ধেক মাটিতে আর অর্ধেক নদীর পানিতে থাকার ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের ও নৌ চলাচলে। এরপরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অযত্ন আর অবহেলার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে উপড়ে পড়া গাছগুলোর ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের পাশে থাকা গাছ কৃষি জমিতে উপড়ে পড়ার কারণে জমির মালিক (কৃষক) বা বর্গাচাষী ওই কৃষি জমির বিরাট অংশে চাষাবাদ করতে পারছেন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার সড়কের পাশে থাকা পুরানো গাছের ডাল হঠাৎ করেই ভেঙে নিচে পড়ছে। এতে যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে। আবার কোন কোন সড়কে গাছ উপড়ে পড়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া গর্তগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়াতে স্থানীয়দের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিষদের কয়েকটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে উপড়ে পড়া গাছগুলো পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে গাছগুলো নষ্ট হলেও সেগুলো নিলাম হচ্ছে না শুধুমাত্র বন বিভাগ কর্তৃক সঠিক মূল্য নির্ধারণের কারণে। তাছাড়া পরিষদের বাম দিকে থাকা গাছ কেটে সে জায়গায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সঙ্গে মিলনায়তন নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তা হচ্ছে না শুধুমাত্র বন বিভাগ কর্তৃক গাছের সঠিক মূল্য নির্ধারণ না করার কারণে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কিংবা সমন্বয় সভায় একাধিকবার উপড়ে পড়া গাছগুলো বিধি মোতাবেক নিলাম করার দাবি ও সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও শুধুমাত্র বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসীনতার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না।
এদিকে সড়কগুলোর পাশে হেলে পড়া অনেক গাছের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য জোটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, উপজেলা সদরের টিএনটি রোডসহ বিশ্বনাথের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গাছ উপড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাথে সাথে পদক্ষেপ নেয়া হলে গাছগুলো থেকে সরকার যেমন রাজস্ব পেত, তেমনি উপড়ে পড়া গাছের কারণে সড়কেও কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হতো না।
ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, মাঝে মধ্যেই বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে আকস্মিক পুরানো গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সড়কের পাশে থাকা পুরানো গাছগুলোর ডালপালা কেটে অথবা পুরানো গাছগুলো কেটে ফেলে নতুন করে গাছ লাগালে মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যেতো।
উপজেলার জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যখানে থাকা প্রায় শত বছরের পুরনো গাছটি বিধি মোতাবেক কেটে ফেলার অনুমতির জন্য প্রায় দেড়-দুই বছর আগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আজও অনুমতি পাইনি। গাছটি বিদ্যালয়ের মধ্যখানে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাও করতে পারে না। তাছাড়া হঠাৎ করেই গাছের ডালপালা ভেঙে মাটিতে পড়ে। সেজন্য সর্বদা আমাদেরকে একটি অজানা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।