ইউএনবিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা (মহামারি পরিস্থিতি) থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।’ বিভিন্ন দেশকে কোভিড পরবর্তী যুগে আরও সৃজনশীল হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: অব্যবহৃত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ঢাকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী ইসলামাবাদ
রাষ্ট্রদূত তাবাজারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসার বর্তমান পথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, এলডিসি গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর বাণিজ্য ক্ষেত্রে হয়ত অনেক বাধা দেখা দিতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রচলিত বাজার ছাড়িয়ে রপ্তানি প্রসারিত করতে বিভিন্ন বাজারের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।
তাবাজারা বলেন, বাংলাদেশকে বড় অর্থনৈতিক শক্তি বিবেচনা করে ব্রাজিল বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ-ব্রাজিল শক্তিশালী জোট গঠন করতে পারে। জোট গঠনের এ বিবেচনায় দেশের আকার নয় বরং এর বিরাট অর্থনীতি ও বাজার বিবেচ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রাজিলিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি সহযোগিতার অনেক জায়গা দেখতে পান এবং প্রত্যেকে পরস্পরের বাজারে স্বাভাবিক প্রবেশাধিকার পেতে পারে।
আরও পড়ুন: ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্য একই: রাষ্ট্রদূত ভিয়েত চিয়েন
বাংলাদেশের সামনে নতুন ব্রাজিলকে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন কি না জানতে চাইলে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও তিনি তা করতে পারছেন।
এ কাজের অন্যতম বড় ফল হলো ব্রাজিল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) প্রতিষ্ঠা, বলেন রাষ্ট্রদূত।
ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ, এক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এবং দেশটি লাখ লাখ নাগরিককে দারিদ্র্যমুক্ত করতে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের পদক্ষেপ চালিয়েছে। যদিও দেশটিতে ধনী ও গরিবের ফারাক এখনও বিশাল রয়ে গেছে।
‘লাতিন আমেরিকার কেন্দ্রে থাকা ব্রাজিল বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন প্রান্ত হতে পারে,’ উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত তাবাজারা।
তিনি বলেন, এই অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশ তাদের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক বাড়াতে চেষ্টা করছে।
বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে শুল্কের বিষয়টি সহজ করতে তারা আলোচনায় আছেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের কম।
‘আমরা একটি শুল্ক চুক্তি বা ব্যবস্থা করতে পারি এবং এটা হবে উভয় দেশের জন্য বিশাল একটা কিছু,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ উদীয়মান বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি: ইরানের রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূত তাবাজারা বলেন, দুই দেশের অর্থনীতি যাতে মহামারি পরবর্তী সময়ে উপকৃত হতে পারে সে জন্য অনেক প্রাথমিক বিষয়ে কাজ সারতে হবে। ‘আসুন কিছু একটা করি।’
ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ চিনি, গম ও তুলা আমদানি এবং পোশাক, ওষুধ, প্লাস্টিক, থালাবাসন, ভেজিটেবল টেক্সটাইল ফাইবার, পাটপণ্য ও হাতে তৈরি আঁশ রপ্তানি করে।
প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রাজিলিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি সই করার চূড়ান্ত ধাপে আছেন। এর ফলে কৃষির মতো বাংলাদেশের আগ্রহের সব ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতা বিনিময় শুরু করতে পারবে।
‘এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল এখানে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে পারবে। ব্রাজিলিয়ান কৌশল, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও প্রণালী, আমাদের উদ্ভাবন করা সবকিছু এখানে প্রয়োগ করা যাবে,’ বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত তাবাজারা বলেন, এমন সহযোগিতা বাংলাদেশকে কৃষি খাতে নতুন জমি ব্যবহার ছাড়াই উৎপাদন চার গুণ বাড়াতে সাহায্য করবে। ‘আমি বিশ্বাস করি, এর ফলে বাংলাদেশ আমদানি নির্ভরতা কাটাতে এবং এমনকি আরও রপ্তানি করতে পারবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা তার একটি।
আমাজন বন
আমাজন বনের বেশির ভাগ ব্রাজিলে অবস্থিত। পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বন ধ্বংস করা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে: রাষ্ট্রদূত মিলার
এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ক্ষেত্রে ব্রাজিল খুব সক্রিয় রয়েছে। নতুন সরকার আমাজন রক্ষায় নতুন কৌশল ও কাঠামো নিয়েছে।
‘আমাজন খুব সমৃদ্ধ। সেখানে আপনার সবকিছু রয়েছে। এটা প্রাকৃতিক সম্পদের স্বর্গ। এখন শুধুমাত্র আমাজনের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি নতুন জাতীয় বাহিনী আছে,’ বলেন রাষ্ট্রদূত।
গত ২০২০ সালের প্রথম চার মাসে ব্রাজিলিয়ান আমাজনের ১২০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি বন ধ্বংস করা হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। উপগ্রহের ছবির মাধ্যমে পরিবেশ বিনাশের ওপর নজর রাখা সরকারি সংস্থার বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত তাবাজারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি নিয়ে দেনদরবারের ক্ষেত্রে অন্যতম সক্রিয় দেশ ছিল ব্রাজিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব: পানিবণ্টন নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চায় দিল্লি
জনকূটনীতি
জনকূটনীতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে তার প্রচুর এজেন্ডা ছিল কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কার্যক্রম ধীর হয়ে গেছে।
‘ব্রাজিলের এখন উত্তম ভাবমূর্তি রয়েছে এবং দেশটি আগের চেয়ে বেশি পরিচিত। এ দেশে আমাদের দূতাবাস রয়েছে ২০১০ সাল থেকে কিন্তু আমাদের দেশকে সবাই চিনত। এখন বরং লোকজন আমাদের উপস্থিতি সম্পর্কে ভালো জানে,’ বলেন তিনি।