শহীদ মিনারে নামফলকে রাজাকারের নাম দিয়ে তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসফেকুর রহমান মিল্টনের বিরুদ্ধে। যদিও মিল্টন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় ৯৪ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে নেই শহীদ মিনার
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার হিসেবে বাখেরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অত্যাচার নির্যাতন করার কারণে এলাকা থেকে বিতাড়িত হতে হয় রাজাকার জব্বার মোল্যা ওরফে জব্বার সরদার, তার ভাই আবেদ আলী, রাশেদ মোল্যা, বিলাত আলী সরদারসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের। পরবর্তীতে সুবিধামতো সময়ে তারা আবার এলাকায় ফিরে আসলেও সামাজিকভাবে তারা রাজাকার পরিবার হিসেবেই পরিচিত। জব্বার মোল্যার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা নিজেদের পরিবারের অন্ধকার পর্বকে ঢাকতে নানারকম চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় গত তিন বছর আগে এলাকার স্থানীয় বাখেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার নির্মাণে কৌশলে কিছু খরচের হাত বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর কুমিল্লার প্রথম শহীদ মিনার ভিক্টোরিয়া কলেজে
দেখা গেছে, শহীদ মিনারটির পাদদেশে একটি নাম ফলকে স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হোসেন মোল্যাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধক হিসেবে দেখানো আছে। যেখানে বিশেষ অতিথি মসফেকুর রহমান। শহীদ মিনারের বেদীর ঠিক বাম দিকে সৌজন্য হিসেবে ওই গ্রামের এক রাজাকার মৃত জব্বার মোল্যা ও তার ছেলে আকরাম হুসাইনের নাম অঙ্কিত করা হয়েছে। ওই পরিবারের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে শহীদ মিনারে তাদের নাম লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ, ছেলেরা ইতিপূর্বে অন্যান্য দল করলেও সম্প্রতি স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসফেকুর রহমান মিল্টনের হাত ধরে সরকারি দলের সাথে মিশে পরিবারের অন্ধকার দিকটিকে মুছতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা শহীদ মিনারে কৌশলে তাদের বাবা রাজাকার আ. জব্বার মোল্যার নামে ফলক টানিয়েছে। ওই এলাকার মানুষ ভয়ে তেমন কথা বলতে না চাইলেও এ ঘটনায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
মাগুরার মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন পরিবর্তনে আমরাই এর সভাপতি নাহিদুর রহমান দুর্জয় বলেন, ‘একুশ মানে মাথা নত না করা। কিন্তু বাখেরা গ্রামে শহীদ মিনারে রাজাকারের নাম আমাদের নতুন প্রজন্মকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে। আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী মাগুরা জেলা শাখার নাট্য সম্পাদক মো. আল আমীন জানান, স্কুলের ‘শহীদ মিনারে রাজাকারের নামফলক থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য যাচ্ছে। আমরা দ্রুত এ নাম ফলকের অপসারণ চাই।’
তবে নিজের নামের পাশাপাশি একই শহীদ মিনারে একজন রাজাকারের নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না বরং রাতের অন্ধকারে কেউ শহীদ মিনারে রাজাকারের নাম লিখে রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হোসেন মোল্যা।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় সাড়ে ১২শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. ইকরাম আলী বিশ্বাস বলেন, ‘বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে অত্যাচার নির্যাতনের ফলে ওই পরিবারটি মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত। তাদের নাম শহীদ মিনারের ফলকে স্থাপন করা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত কষ্টের। আমরা দ্রুত এ নামফলক অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
আরও পড়ুন: শহীদ মিনার নেই যশোরের ৬৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
এ ব্যাপারে সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসফেকুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘শহীদ মিনারটি উদ্বোধনের সময় সেখানে কোনো নামফলক ছিল না। পরবর্তীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ নামফলকটি লাগিয়েছে। আমরা ফলকটি তুলে ফেলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।’