কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রিধান-৮৭ অধিক ফলনশীল জাতের একটি রোপা আমন ধান। জীবনকাল কম হওয়ায় ধান কর্তনের পর একই জমিতে অনায়াসে রবি ফসল বিশেষ করে সরিষা ও মসুর চাষ করা যায়।
ব্রিধান-৮৭ জাতের ধানের চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এ জাতের ধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি অধিক ফলনশীল এবং এর জীবনকাল কম।
পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছ ১২২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্রিধান-৮৭ জাতের ধানের ডিগ পাতা খাড়া, লম্বা ও চওড়া এবং পাতার রং হালকা সবুজ। এ জাতের ধান গাছের কান্ড শক্ত তাই গাছ লম্বা হলেও ঢলে পড়ে না। ধানের ছড়া লম্বা ও ধান পাকার সময় ছড়া ডিগ পাতার উপরে থাকে। ধান পাকার সময় কান্ড ও পাতা সবুজ থাকে। ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় শিষের গোড়ার ধানও পুষ্ট হয়। এর গড় জীবনকাল ১২৭ দিন। হেক্টর প্রতি সাড়ে ছয় টন ফলন পাওয়া যায় এই ধান। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রিধান-৮৭ জাতটি প্রতি হেক্টরে সাত টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
এ ধানের চালের আকার ও আকৃতি লম্বা ও চিকন এবং রং সাদা। এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.১ গ্রাম। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ ভাগ । এ ধানের চালের ভাত ঝরঝরে।
মো. আ. কাদের শেখ (৬০) রূপসা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক। তিনি এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় এক একর জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের একটি রোপা আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেন।
সম্প্রতি এ প্রদর্শনীর নমুনা কর্তন করে হেক্টর প্রতি সাড়ে ছয় মেট্রিক টন ধানের ফলন পাওয়া গেছে। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৩ মণ। ধানের এ বাম্পার ফলন পেয়ে দারুণ খুশি কৃষক আ. কাদের।
তিনি জানান, বীজতলায় বীজবপণ ও চারা রোপণের পর মাত্র ১৩০ দিনের মধ্যে তিনি এ ধান কর্তন করে বিঘা প্রতি ২৩ মণ ফলন পেয়েছেন। অল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও এ জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ গ্রামের অনেক কৃষক তার নিকট বীজের জন্য এ ধান ক্রয় করতে চেয়েছেন। তিনি এ ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে তা আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিক্রি করবেন। যাতে আগামীতে আলাইপুর গ্রামে ব্রিধান-৮৭ ধানের ব্যাপক চাষ হয়।
একই গ্রামের মো. আবুল হাসান, মো. আনোয়ার হোসেন, লুৎফর রহমান শেখ ও ইসলাম সরদারসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এ বছরই প্রথম ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। ভালো ফলন পাওয়ায় তারাও খুব খুশি।
কৃষকরা জানান, এ জাতের ধানে পোকামাঁকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম। বিশেষ করে ক্ষতিকর বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) আক্রমণ হওয়ার আগেই এ ধান কর্তন শুরু হয়।
রূপসা উপজেলার কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প এবং বীজ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় মোট ১৭৩ হেক্টর জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান চাষ হয়েছে। এ জাতটি স্বল্প সময়ে অধিক ফলন দেয়। এ জাতের ধান চাষ ও বীজ উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করতে এ উপজেলায় ৫টি এসএমই কৃষক মাঠ স্কুল ও বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনীর কয়েকটি নমুনা শস্য কর্তন করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। এসব প্রদর্শনীতে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আগামীতে এ ধানের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।