সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ গবাদিপশু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গবাদিপশু খামার মালিকরা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, আলিপুর, লাবসা, ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, বাঁশদাহ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
তারা জানান, গত কয়েকদিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ঘোষপাড়ায় অন্তত ১৮টি গরু মারা গেছে। দেশি ও ক্রস বিভিন্ন জাতের বড় বড় এসব গরুর মৃত্যুতে চরম ক্ষতির শিকার সাধারণ মানুষ। পার্শ্ববর্তী ফিংড়ির বালিথায় মারা গেছে আরও কয়েকটি গরু। একই ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুরে মারা গেছে দুটি গরু। এছাড়া শতশত গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরও এই রোগে আক্রান্ত পশুকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এসব এলাকার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো গবাদি পশু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই অবস্থা খামারি মালিকদেরও।
আরও পড়ুন: গরুর খুরা রোগে খুলনায় কমেছে দুধ উৎপাদন
গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগে উদ্বিগ্ন ফরিদপুরের খামারিরা
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর বাজার এলাকার সুব্রত বিশ্বাস নয়ন জানান, গত এক সপ্তাহের মধ্যে তার এলাকার নিরঞ্জন ঘোষ ছট্টু মেম্বরের ৬টি, সুভাস ঘোষ, কার্তিক ঘোষ, গৌর ঘোষ, বাবুরাম বিশ্বাস, বাবু বিশ্বাস, নিতাই ঘোষে, হরেন্দ্রনাথ ঘোষ ও বাবু ঘোষের একটি করে গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাছাড়া প্রায় প্রত্যেক গোয়ালের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, হঠাৎ করেই গবাদি পশুর মধ্যে ক্ষুরারোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে গরুর পায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। এরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। রোগাক্রান্ত গরুটি হাঁটাচলা করতে পারে না। কোনো প্রকার খাবার খেতে পারে না। স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরপরও এই রোগে আক্রান্ত গরুকে বাঁচানো যাচ্ছে না।
ব্রম্মরাজপুর গ্রামের নিরঞ্জন ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছে। রোগাক্রান্ত পশুর ব্যাপারে পরামর্শ নিতে সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায় না। এই সময়েও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুর চিকিৎসা দেয়া নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পশুকে ক্ষুরারোগ আক্রান্ত থেকে প্রতিকার চেয়ে ভ্যাকসিন দেয়ার দাবি জানান খামার মালিকরা।
সদর উপজেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ মণ্ডল জানান, হঠাৎ করেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। শুধু সাতক্ষীরা সদরে নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গবাদি পশু বাঁচাতে চরম আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে।
তিনি জানান, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গবাদি পশু হার্ট লিক হয়ে শ্বাস কষ্টজনিত কারণে তাৎক্ষণিক মারা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন দিলেও কাজ হচ্ছে না।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জয়ন্ত কুমার সিংহ জানান, সদর উপজেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে মাত্র ৪ হাজার। সরকারি ভ্যাকসিন ১২ টাকা। সেখানে বেসরকারি ভ্যাকসিন ৫০ টাকা। সরকারি ভ্যাকসিন সংকট থাকায় বেসরকারিভাবেও ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খামারিরা বেসরকারিভাবে উন্নত ভ্যাকসিন দিলেও গবাদি পশু বাঁচানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে গবাদিপশুর বাছুর আক্রান্ত হলে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, সদর উপজেলায় ৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে।
আরও পড়ুন: গবাদি পশু ও দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের সাথে ৫০ কোটি ডলারের চুক্তি
ডা. জয়দেব জানান, ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো গরু সুস্থ হলে সেই সুস্থ গরুর রক্ত আক্রান্ত গরুকে দিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তবে কেউ রক্ত দিতে ও নিতে চাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম বলেছেন, গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিন কম থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। একটি গরুর ক্ষুরারোগ প্রতিরোধে যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়, তার মেয়াদ থাকে ৬ মাস। কিন্তু খামারিরা ভ্যাকসিন নেয়ার পর আর আসে না। এরপর যখন আক্রান্ত হয় তখন দ্রুত সুস্থ করানো সম্ভব হয় না।