এদিকে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরে নৌকার নিবন্ধন সনদ (বিএলসি) নবায়ন কম হওয়ায় গোলপাতা সংগ্রহে বাওয়ালিদের আগ্রহও কম দেখা যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কম হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, নৌকার পেট কেটে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ানো ও বাড়তি মলম তৈরির অভিযোগও উঠছে কিছু বাওয়ালিদের বিরুদ্ধে।
বনবিভাগের সূত্র জানায়, আগামীকাল ২৮ জানুয়ারি প্রথম দফায় গোলপাতা আহরণ বনে প্রবেশের (পাশ-পার্মিট) অনুমোদন দেয়া শুরু হবে। তবে এবছর কমেছে বিএলসি নবায়ন। গত ১২ জানুয়ারি নৌকা যাচাই-বাছাই পর্ব শেষ হয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গোলপাতা আহরণের মৌসূম হলেও কর্তৃপক্ষ এবার বনে প্রবেশের অনুমোদন দিতে দেরি করেছে।
সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের সর্বমোট ৫৫টি কুঠরির মধ্যে ছয়টি কূপে জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। যেখানে পর্যাপ্ত গোলপাতা মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বনরক্ষীরা। এর মধ্যে পশ্চিম বিভাগের তিনটি হলো- সাতক্ষীরা, আড়ুয়া শিবসা ও শিবসা কূপ এবং পূর্বের তিনটি কূপ হলো শরণখোলা, চাঁদপাই ও শেলা রেঞ্জ।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সুন্দরবন লন্ডভন্ড হলে সরকার ওই বছর থেকে গরানের অনুমোদন বন্ধ করেছিল।
এদিকে, নৌকা মালিকরা বড় নৌকা মেরামতের নামে যাচাইয়ের পরে তা কেটে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ানো ও অতিরিক্ত জায়গা তৈরি করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
বনে প্রবেশের অনুমোদনের সময় উল্লেখিত ওজনের কয়েকগুণ বেশি গোলপাতা আহরণের জন্যেই তারা এমনটি করছেন বলে সূত্র জানায়।
বাওয়ালিরা বলছেন, ‘প্রতিবছর সময় মতো গোলপাতা সংগ্রহ করলে গোলগাছের পরিচর্যা হয় এবং গেলাপাতার জন্মানোর পরিমাণও বেড়ে যায়। সময়মতো গোলপাতা কাটা ও সংগ্রহ করা না হলে এসব পাতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে, গোলপাতার ঝাড় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ বছর গোলপাতা সংগ্রহে অনেক দেরি হয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুন বলেন, গোলপাতা সংগ্রহে বনে প্রবেশের অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে গত বছরে ১৬ লাখ ১০ হাজার ৪৮৩ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছিল। গোলপাতা আহরণের পাস দেয়ার সকল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আগামীকাল থেকে গোলপাতা আহরণের পাস দেয়া শুরু করবো। এ বছরে বিএলসি নবায়ন কম হয়েছে। তাছাড়াও নানা কারণে গোলপাতা আহরণে বাওয়ালিদের মধ্যে আগ্রহ কমেছে। গত বছর ৬ লাখ ২৫ হাজার ৯০৭ টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছিল গোলপাতার পাস-পারমিট খাত থেকে।
এ বছরে রাজস্ব কম হবার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সুন্দরবন যেনো কোনোভাবে ধ্বংস করা না হয় সে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের উপর বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল এ জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প উপার্জন খাত সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতি বছরই বাওয়ালিদের সংখ্যা কমছে জানিয়ে বনজীবী ফেডারেশনের আহ্বায়ক মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু জানান, নীতিমালা মেনে নৌকা প্রস্তুত করার পরেও বনবিভাগ যে কঠোরতা দেখাচ্ছে-তাতে বাওয়ালিদের মধ্যে গোলপাতার পাস সংগ্রহে অনিহা বাড়ছে।