হাওরের কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে যে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তাতে ভারসাম্য আনতে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ সময়ই আকস্মিক বন্যায় এক দিনের ব্যবধানে হাওরের সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
ছোট প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘হাওর অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রায় ২৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধীনে রয়েছে।
সরকারি তথ্য মতে, এ প্রকল্পের আওতায় শস্য উৎপাদনের পর তা নিরাপদে সংরক্ষণ করতে কৃষকদের জন্য ৭০ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করা হবে।
পাশাপাশি, সুনামগঞ্জ ও অন্যান্য হাওর বেষ্টিত অঞ্চলের পল্লি অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে দুটি প্রকল্প রয়েছে। এগুলো হলো- হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন (১) এবং বন্যা ব্যবস্থাপনা ও হাওর অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন (২)।
মূলত সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশের হাওরগুলোর অবস্থান। যেখানে বর্ষাকালে বিস্তৃর্ণ জলরাশি দেখতে অনেকটা সাগরের মতো দেখায়।
ওই দুটি প্রকল্পের মধ্যে কমিউনিটি সড়ক উন্নয়ন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন, বিল উন্নয়ন, গ্রাম প্রতিরক্ষা কার্যক্রম, মডেল গ্রাম উন্নয়ন, হাট উন্নয়ন, অবতরণ ঘাট উন্নয়ন এবং আয় বৃদ্ধির প্রশিক্ষণসহ সড়ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হাওর অঞ্চলের প্রকল্পগুলোর সংকলন নথিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার ইতোমধ্যে হাওর অঞ্চলে সড়ক ও সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে।’
কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সুনামগঞ্জের ২৯টি হাওরে বোরো ধান রক্ষায় এবং কৃষি ক্ষেত্রের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্প (২) হাতে নেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ৪৬১ কিলোমিটার নদী ও খাল পুনঃখনন, ২৬৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ৮৭ কিলোমিটার বাঁধের পুনঃনকশা প্রণয়ন এবং ৮৪ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ‘নদী ও খাল পুনঃখননের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করা হবে এবং কাটা ফসলাদি পানিপথে পরিবহন করা হবে।’
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলায় ৬৩৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩.২২ কোটি টাকা।
'পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও নৌপরিবহনের সুবিধার্থে হাওর অঞ্চলে কজওয়ে (সেতুর মতো) নির্মাণ’ নামে হাওর অঞ্চলের আরও একটি প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জে ৮৫টি এবং হবিগঞ্জে পাঁচটিসহ মোট ৯০টি কজওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কজওয়ে এমন একটি সড়ক ব্যবস্থাপনা, যার ওপর দিয়ে যেকোনো যানবাহন চলাচলের সড়ক থাকবে এবং নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারবে।
বর্তমানে ৫০০.৯৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উপরে উল্লিখিত কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্ষা মৌসুমেও কৃষকরা তাদের ফসল পরিবহন করে লাভবান হতে পারবেন।
এছাড়াও ধান মাড়াই ও শুকানোর সুবিধার্থে এ প্রকল্পের আওতায় বাঁধের পাশে ২০টি মাড়াই ও শুকানোর স্থান এবং ৪০টি শেড (প্রতিটি মাড়াই ও শুকানোর স্থানের পাশে দুটি) নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।