কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা নীরব ক্যাম্পাসে এ বছর ভালোভাবেই আবাস গড়েছে অতিথি পাখিরা।
বড় ও রঙিন শাপলার এবং বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি মেলবন্ধনে ইবির লেক এক স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে।
এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত উপভোগ করতে এসে আবাস গড়া হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস এলাকা। বছরের এ সময়টাতে সকালে অতিথি পাখির কলরবে জেগে উঠেন ক্যাম্পাসে বসবাসকারীরা।
প্রতি বছরের শীতকালে সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া এবং অন্যান্য হিমালয় অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে আসে।
খাবারের অভাব ও শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে অতিথি পাখিরা স্ব স্ব দেশ ছেড়ে যে দেশে তুলনামূলক শীত কম সেদেশে চলে আসে, বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগের প্রভাষক ইনজামুল হক সজল।
ইবির লেকে অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় বেশি আসে ল্যাঞ্জা হাঁস, খুঁনতে হাঁস ও বালি হাঁস।
ইবিতে সম্প্রতি ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থীর অভিযোগ, লেকের পানিতে কচুরিপানা বেশি থাকায় পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার কাটতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান বাদশা রিপন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এত বিশাল সংখ্যক অতিথি পাখি একসাথে আমাদের ক্যাম্পাসে দেখতে পারা সত্যিই আনন্দের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই পাখিদের ব্যাপারে আরও আন্তরিক হওয়া উচিত। কেননা লেকের পানিতে কচুরিপানা থাকায় তারা অবাধে চলাফেরা করতে পারছে না।
ইবির ভারপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আলিমুজ্জামান টুটুল জানিয়েছেন তারা খুব শিগগিরই লেকের পানি থেকে কচুরিপানাগুলো সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করবেন।
শীতে পরিযায়ী পাখির উপযুক্ত আবাসস্থল বাংলাদেশ
শীতকালে শীতপ্রধান দেশে তাপমাত্রা কমে অনেক সময় হিমাঙ্কের নিচে চলে যায়। শীতের এ সময়টাতে শত শত প্রজাতির অতিথি পাখির জন্য বাংলাদেশ পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠে। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত মালভূমি অঞ্চল থেকে পাখিরা শীত উপভোগ করতে উষ্ণ শীতকালীন বাংলাদেশের নদী ও খাল-বিলে উড়ে আসে।
বাংলাদেশে বৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি ও আবাসস্থল হিসেবে এসব জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিরা বসবাস করে বলে এর আন্তর্জাতিক পরিবেশগত গুরুত্বও রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) অনুসারে, সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ের (সিএএফ) মধ্যে বাংলাদেশের টাঙ্গুয়া হাওর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল, সোনাদিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও আরও অনেক জলাভূমি অতিথি পাখিদের আবাস ও খাবারের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।