বাজারে চিকন চাল কেজিতে এক টাকা ও মোটা সব ধরনের চালে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। আমন মৌসুম চলাকালে এ নিয়ে দুই দফা দাম বাড়ালেন মিল মালিকরা।
এদিকে মিল গেটে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের চালের খরচ কিছুটা বাড়ল। দাম বাড়লেও কাউকে বাজার মনিটরিং করতে দেখা যায়নি।
খাজানগর মোকামের একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে মাসখানেক আগে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের বাজার কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছিল। ধানের বাজার বাড়ায় নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মিনিকেট চাল কেজিতে এক টাকা ও মোটা সব ধরনের চাল কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত মিল গেটে দাম বেড়েছে।
ধানের বাজার বাড়লে চালের বাজার সমন্বয় করতেই এ দাম বাড়ানো হয় বলে জানান তারা।
লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধানের বাজার প্রতি মণে ৫০ টাকা বেড়েছে। সেই কারণে চালের দাম মিল গেটে বেড়েছে। চিকন জাতের মিনিকেট চাল ২৫ কেজির প্রতি বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১২০ টাকা থেকে এক হাজার ১৩০ টাকা। সেই হিসেবে ৫০ কেজির বস্তার দাম হচ্ছে দুই হাজার ২৬০ টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৪৫ টাকা ২০ পয়সা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। কোথাও আরও বেশি। এছাড়া কাজললতা ৩৬ টাকা, আটাশ ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা ও মোটা জাতের স্বর্ণা ২৭ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, বাসমতি, মিনিকেট, কাজললতা ও স্বর্ণা ধানের দাম প্রতি মণে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। সেই কারণে চালের বাজার সমন্বয় করা হয়েছে। কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে চালের বাজার।'
সোমবার খাজানগর মোকামে মিনিকেট চাল মিল গেটে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে সাড়ে ৪৩ টাকায়। একইভাবে কাজললতা ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা, আটাশ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা এবং স্বর্ণা ২৪ থেকে বেড়ে বর্তমানে ২৭ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
এক মাস আগে আমন মৌসুম চলাকালেও এক দফা চালের বাজার বেড়ে যায়। সেসময় এখনকার বাজার থেকে চালের বাজার আরও কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কম ছিল।
এদিকে খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়লেও মনিটরিং দলকে এখন পর্যন্ত কোনো মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার করা হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকে।
সেই সাথে মোটা চালের দাম বাড়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। চালের বাজারে তাদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হবে। দাম বাড়লে দুর্ভোগও বেড়ে যাবে।
মিল গেটে চালর দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। পৌরবাজারসহ সব বাজারে চালের দাম কেজিতে তারা দুই থেকে তিন টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। খাজানগরে দাম বাড়ায় দেশের সব চালের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে অনেক মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীর গোডাউনে বিপুল চাল ও ধান মজুদ আছে। দাম বাড়ার সুযোগে তারাও কম দামে কেনা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাড়তি ফায়দা লুটে নেবেন।
এ বিষয়ে জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, বছরের একটা সময় আসে যখন মিল মালিকরা হুট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন। তারা দু-এক সপ্তাহে ফায়দা লুটে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করে নেন। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। এবারও এমন ঘটনা ঘটেছে।
তিনি মনে করেন, কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে চাল তৈরি করে রাখেন অনেক মিল মালিক। সুযোগ বুঝে বেশি দামে ছেড়ে দেন। কড়াভাবে মনিটরিং করলে তারা হুট করে বাজারে টালের দাম বাড়বে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, অযৌক্তিক কারণে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসন থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়ে থাকে।
ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে যদি কোনো মিল মালিক অতিরিক্ত লাভ করে থাকলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।