এমন করে পাঁচ বছরের সন্তান পার্থ মণ্ডলের অসুস্থতায় নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালেন খুলনার কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের গৃহবধূ মাধবী মণ্ডল।
মাধবীর পরিবারের মতো কয়রা উপজেলায় পানিবন্দি ৪২ গ্রামের অনেক বাড়িতেই এখন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও চিকিৎসক সংকটেও ভুগছেন তারা।
তবে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা দাবি করেছেন, পানিবন্দি গ্রামগুলোতে তাদের ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং কোথাও চিকিৎসা সংকট নেই।
একই গ্রামের অর্চনা তরফদার বলেন, ঘরের চারপাশের পানিতে নোংরা আবর্জনা জমে বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে মেয়েরা কিছু মুখে তুলতে পারছে না। কিছু খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। এক ছেলে মোবাইলে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে খেয়েছে।
দেখা গেছে, এলাকায় চলাচলের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক সবখানেই কোমর পানি। ঘর থেকে বাইরে যেতে হলে নৌকা অথবা ভেলার প্রয়োজন হচ্ছে। ভাটার সময় পানি কমলে পানি একটু কমে। তখন পা মেপে মেপে বাজারে যায় গ্রামের অনেকেই। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের পৌঁছানো দায়। যে কারণে চাইলেও দূর্গত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা সদর থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন দুটিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। তাদের মাঝেও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ওই এলাকায় খাবার পানি ও ঘরগৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট তীব্র হয়েছে। ফলে ব্যাধ্য হয়ে তারা নোনাপানি দিয়েই ঘরগৃহস্থালির কাজ সারছেন। এতে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
উত্তরবেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম জানান, তার ছেলে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। তার নিজের হাত ও পায়ে চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ভিজে ভিজে এ অবস্থা হয়েছে। চারপাশে পানি থাকায় কোনও হাসপাতালে যেতে পারেননি তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে, মদিনাবাদ, ঘাটাখালি, গোবরা, দশহালিয়া, গোলখালি, জোড়শিং, হরিয়ারপুর, গাববুনিয়া গ্রামগুলিতে। সেখানে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া এবং সর্দি-জ্বরসহ পানিবাহিত নানা রোগে।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদীপ বালা বলেন, দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় ওই পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের মেডিকেল টিমের মাধ্যমে এলাকাবাসির মধ্যে সচেতনা বড়াতে কাজ করছি। সেই সাথে নৌকায় করে পানিবন্দী এলাকায় খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, দূর্গত এলকায় যাতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব না ছড়াতে পারে সেজন্য স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পানিবন্দী এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।