সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশি দাম পাবার আশায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে চরাঞ্চলে আগাম জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন অনেক কৃষক। এ বছর ফলন ও দর দুটোই ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অনেক এলাকার টমেটো খেতে ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিষেধক ওষুধ স্প্রে করেও ফল না পেয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে আগাম টমেটো চাষে খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এখন জমি থেকে টমেটো সংগ্রহের ভরা মৌসুম চলছে। গত বছর ফলন ভালো হলেও দর ভালো পাওয়া যায়নি। এবার গত বছরের তুলনায় ফলন কিছুটা কম হলেও দর খুব ভালো রয়েছে।
মৌসুমের শুরুতেই প্রতি মণ টমেটোর দাম পাওয়া গেছে দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মণে ১ হাজার থেকে ১,১০০ টাকা দর পাওয়া যাচ্ছে। চাষিরা লাভের মুখ দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে জমিতে ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এতে টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ ও কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শে প্রতিষেধক ওষুধ স্প্রে করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার দেবীনগর এলাকার টমেটো চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, এবার তিনি এক বিঘা জমিতে আগাম টমেটো আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তিনি দুই বার জমি থেকে টমেটো তুলেছেন। উৎপাদন খরচ উঠে গেছে। এখন থেকে যা উঠবে তা লাভজনক হবে। তার আশা এই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে।
কিন্তু গাছে ভাইরাসের কারণে চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি। কারণ জমিতে প্রতিষেধক স্প্রে করে ভাইরাস যাচ্ছে না।
আরেক চাষি আব্দুর রহমান বলেন, এবার আমি ৫ বিঘা জমিতে টমেটোর আগাম চাষ করেছি। প্রথম থেকে গাছ খুব ভালো ছিল, ফুল-ফল ভালো ছিল। দুইবার আমরা ফলনও ভালো পেলাম। হঠাৎ করে ভাইরাসটা আসার পর থেকে লাল হয়ে যাচ্ছে গাছ। আমরা কৃষি বিভাগ ও বিষ কোম্পানির লোক ডেকে এনে দেখালাম। তারা পরামর্শ দিল যে বিষ ব্যবহার করতে আমরা সেটাই ব্যবহার করছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। মাঠ জুড়ে এই অবস্থা বিরাজ করছে।
টমেটো চাষি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা আগাম চাষ করি দাম ভালো পাবো বলে। এবার ফলন গত বারের তুলনায় কিছুটা কম হলেও দর ভালো। শুরুতেই ১৫’শ টাকা মণ দর পাওয়া গেছে। এখনও দর ভালো আছে। কিন্তু এই ভাইরাস দেখা দেয়ার পর থেকে গাছ লাল হয়ে গেছে, ফলন কমে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলায় অনেক আগে থেকেই আগাম জাতের টমেটো চাষ করে থাকেন অনেক চাষি। এবার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। চাষিরা হাইব্রিড জাত মানিক, রতন প্রভৃতি জাতের আবাদ করে থাকেন। জমিতে জিপসান সারের ঘাটতি হলে কিংবা পুরাতন বীজ যদি ব্যবহার করা হয় তা হলে ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে।