দেশের এভিয়েশন সেক্টরে রূপান্তরের অঙ্গীকার নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনাল শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে উদ্বোধন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত সমস্ত ‘মেগা প্রজেক্টের’ মধ্যে অন্যতম আলোচিত।
উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে বিমানবন্দরে চলছে মহড়া।
উদ্বোধনের দিন রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহযোগিতায় উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি৩৭১ ফ্লাইটটি ইতোমধ্যে টার্মিনাল থেকে দু'বার উড্ডয়ন করেছে। যদিও সেখানে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য কাগজপত্রের কাজ সম্পন্ন হয়নি।
উদ্বোধনের আগে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় টার্মিনাল-৩ এর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
মূল টার্মিনাল ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি সুবিধা সম্বলিত কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, কার্গো কমপ্লেক্সটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবারের সফট ওপেনিং- এর জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি চালু করা।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ এগিয়ে চলছে এবং আমরা নিশ্চিত যে নির্ধারিত সময়সীমার আগে টার্মিনালটি চালু হবে।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম ইউএনবিকে বলেন, টার্মিনাল-৩ সফট ওপেনিংয়ের জন্য জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর জন্য নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কর্তব্যরত কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন মহড়া চালিয়েছে এয়ারলাইন্সটি।
টার্মিনাল ৩ একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং পছন্দের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি ৩৭টি বিমান পার্কিং স্পেস দিয়ে শুরু হয়, যেখানে ইতোমধ্যে কিছু এয়ারলাইন্স দেখা গেছে। এর আগে সেগুলোকে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করতে দেখা যায়নি।
২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (যার মধ্যে ১২টি অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা) এবং ১৫টি সেলফ-সার্ভিসসহ ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বা উড়ে যাওয়া যে কোনো ব্যক্তির জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
নিচতলায় ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, দ্বিতীয় তলায় ডিপারচার লাউঞ্জ ও বোর্ডিং ব্রিজ এবং বিস্তৃত শুল্কমুক্ত দোকান ও এক্সিট লাউঞ্জ থাকবে।
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল
টার্মিনাল ৩ সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে বার্ষিক ১ দশমিক ২০ কোটি (১২ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। বর্তমানে বিমানবন্দরটি বছরে ৮০ লাখ (৮ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দিতে সক্ষম।
একটি বহুতল গাড়ি পার্কিং সুবিধা, কাস্টমস হল, ভিআইপি এবং ভিভিআইপি যাত্রী এলাকা এবং একটি ট্রানজিট যাত্রী লাউঞ্জও টার্মিনালের অংশ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড সিঙ্গাপুরের রোহানি বাহারিনের নকশায় নির্মিত তিনতলা টার্মিনালের ফ্লোর স্পেস হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বাহারিনের সিভিতে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের প্রশংসিত তৃতীয় টার্মিনাল এবং আহমেদাবাদের নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি করিডোর এবং ১ হাজার ৩৫০ টি পার্কিং স্পেস সহ মাল্টি লেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন টার্মিনালে অটোমেটেড পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেট চালু করা হবে।
যাত্রীরা ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই ইমিগ্রেশন করতে পারেন বা ৫৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন কাউন্টারের মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
একটি আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং উন্নত নিরাপত্তা স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করবে।
টার্মিনালে মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, এয়ারলাইন লাউঞ্জ এবং বিশ্বমানের শুল্কমুক্ত দোকানও থাকবে।
ওয়াই-ফাই, মোবাইল চার্জিং, প্রার্থনার জায়গা এবং একটি মিটার্স এবং গ্রিটার প্লাজার মতো সুবিধাগুলো ভালো পরিমাপের জন্য স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং বুথ, ডায়াপার চেঞ্জিং এলাকা, পারিবারিক বাথরুমসহ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাচ্চাদের একটি ডেডিকেটেড খেলার জায়গা থাকবে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল: ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ