প্রায় ১২ বছর ধরে নওগাঁর মহাবেপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকা জুড়ে অতিথি পাখির আগমন ঘটে প্রতি শীত মৌসুমে। শীতের শুরুতে আসতে শুরু করে অতিথি পাখিরা। এ সময় নদীতে পানির পরিমাণও কম থাকে। বছরের প্রায় ৪-৫ মাস পাখিগুলো এখানেই থাকে। আত্রাই নদীতে পাখিদের আবাস হলেও, রাত হলেই তারা মোহাম্মদপুর, রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি পাশের বিলে চলে যায়। আবার ভোরের দিকে ফিরে আসে।
অতিথি পাখিতে মুখরিত কুমিল্লার পুকুর আর দিঘিগুলো
মহাদেপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে কুঞ্জবন গ্রাম। অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিই দূর দূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া থেকে অতিথি পাখি দেখতে আসা খোরশেদ আলম রাজু জানান, এই প্রথম তিনি এখানে এসেছেন অতিথি পাখি দেখতে। আত্রাই নদীতে পাখির কলরবে পুরো কুঞ্জবন এলাকা পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত। সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারিভাবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নেয়া হলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরও বেশি আগমন ঘটবে এবং সেই সাথে এলাকাটি সুস্থ বিনোদনের কেন্দ্রস্থল হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
অতিথি পাখির কলরবে মুখর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ঘুরতে এসে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হওয়ার কথা জানালেন রাজশাহীর শহরের সাহেবপাড়ার গৃহিনী জাকিয়া জেসমিন। তিনি জানান, একসাথে এত অতিথি পাখি তিনি এর আগে দেখেননি। এখানে পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে প্রতি শীত মৌসুমে আরও বেশি পাখি আসবে বলে মনে করেন এই দর্শনার্থী।
‘বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ’ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার জানান, অতিথি পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নদীর দু’পাড়।
বাঁশি ব্যবহার করে অতিথি পাখি শিকার!
তিনি আরও জানান, বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ এখানে। মনোরম এ পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
‘পাখিদের যেন কেউ শিকার না করতে পারে এবং নদীতে জেলেদের কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণ যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি,’ বলেন মুনসুর সরকার।
অতিথি পাখিতে মুখরিত ফরিদপুরের নুরপুর বিল
মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একেএম জামান বলেন, ‘পাখিদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত, নদীতে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণ যেন বাধাগ্রস্থ না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে পাখি শিকার নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কেউ যদি অতিথি পাখি শিকার করে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’